Bivash Vlog

Find Your Dream Jobs

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) | Rabindranath Tagore (Polymath) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনাবলী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ pdf, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী, বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধের নাম।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭মে (২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার ৯টি ছদ্মনাম পাওয়া যায়- তানুসিংহ ঠাকুর, অকপট চন্দ্র ভাস্কর, আন্নাকালী পাকড়াশী, ষষ্ঠীচরণ দেবশর্মা, বানীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ, শ্রীমতী কনিষ্ঠা, শ্রীমতী মধ্যমা, দিকশূন্য ভট্টাচার্য, নবীন কিশোর শর্মন। উপাধি গুদের বা কবিগুরু। পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। তিনি ছিলেন পিতা মাতার চতুর্দশ সন্তান।

🟢 একনজরে রবীন্দ্রনাথ🟢

আকাশে সূর্য ওঠে প্রতিদিন, আমরা সূর্যের স্নেহ পাই সারাক্ষণ। সূর্য ছাড়া আমাদের চলে না। তেমনি আমাদের আছেন একজন, যিনি আমাদের প্রতিদিনের সূর্য। তাঁর নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)। তিনি আমাদের জীবনে সারাক্ষণ আলো দিচ্ছেন। তিনি বাঙলা ভাষার সবার বড়ো কবি। তাই নয় শুধু, তিনি আমাদের সব। তিনি কবিতা লিখেছেন, গল্প লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন, নাটক রচনা করেছেন, গান লিখেছেন, প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি কী লেখেন নি? তিনি একাই বাঙলা সাহিত্যকে এগিয়ে দিয়ে গেছেন কয়েকশো বছর। আজ যে বাঙলা সাহিত্য বেশ ধনী, তার বড়ো কারণ তিনি। তাই রবীন্দ্রনাথের কথা সহজে অল্প কথায় বলা খুব কঠিন। তাঁর কথা ভালোভাবে লিখতে হলে বিরাট বিরাট বই লিখতে হয়। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন ১৮৬১ অব্দের মে মাসের সাত তারিখে। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। বঙ্গাব্দ অনুসারে দিনটি ছিলো পঁচিশে বৈশাখ। তাঁর পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মায়ের নাম সারদা দেবী। তিনি লোকান্তরিত হন ১৯৪১ অব্দের আগস্ট মাসের সাত তারিখে। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২-এ শ্রাবণ।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। বাল্যকাল থেকেই তিনি সাহিত্যে উৎসাহী ছিলেন। তাঁদের বাড়ির সবাই ছিলেন সাহিত্যে উৎসাহী। তাঁর পিতা ছিলেন লেখক, বড়ো ভাইয়েরা ছিলেন লেখক, বড়ো বোন ছিলেন লেখিকা। তিনিও তাঁদের দেখাদেখি লেখা শুরু করেছিলেন শিশুবয়সে। তিনি ভালোবাসতেন কবিতা পড়তে, ভালোবাসতেন গাছপালার সৌন্দর্য দেখতে। গাছপালা অর্থাৎ প্রকৃতিই ছিল তাঁর বড়ো শিক্ষক। স্কুল তাঁর ভালো লাগতো না। স্কুলের দেয়ালগুলো মনে হতো পাহারাওলাদের মতো কঠোর। তাঁর জীবনকাহিনী তোমরা তাঁর নিজের লেখা দুটি বই থেকে জেনে নিতে পারো। সে-বই দুটি হচ্ছে জীবনস্মৃতি ও ছেলেবেলা। এ-বই দু’টিতে তিনি নিজের কথা বলেছেন মধুর করে; তবে তার আরো অনেক কথা ছিলো বলার, কিন্তু বলেন নি। তাঁর গোপন কথা তিনি গোপন করে গেছেন, কেননা আমাদের সমাজ হচ্ছে গোপনীয়তার সমাজ। সব সত্য এখানে প্রকাশ করা যায় না।

তাঁর যে-কবিতাটি সবার আগে নিজের নামে বেরিয়েছিলো, সেটির নাম ‘হিন্দুমেলার উপহার’। এর আগে তাঁর নিজের নামে কোনো লেখা বের হয় নি। তার যে-বইটি সবার আগে ছাপা হয়, সেটির নাম কবিকাহিনী। বইটি বেরিয়েছিলো ১৮৭৮ অব্দে। তবে এটি তাঁর লেখা প্রথম বই নয়। এ-বই বের হবার দু-বছর আগে তিনি লিখেছিলেন বনফুল নামে একটি কবিতার বই। বনফুল রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রথম বই। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন অনেক অনেক বই, সব বইয়ের নাম আমিও জানি না। তিনি লিখেছিলেন সব রকমের লেখা : কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গান, প্রবন্ধ, নাটক, কাব্যনাটক, ভ্রমণকাহিনী, পাঠ্যবই, সমালোচনা, ব্যঙ্গরচনা, ভাষাতত্ত্ব ইত্যাদি সবকিছু লিখেছেন তিনি। সবদিকেই তাঁর সার্থকতা সকলের চেয়ে বেশি। তাঁর প্রতিভা আমাদের বিস্ময়। তিনি পৃথিবীর এক প্রধান রোম্যান্টিক কবি। তিনিই সবার আগে এশীয়দের মধ্যে লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। ১৯১৩ অব্দে। নোবেল পুরস্কার তাঁর মতো প্রতিভার জন্যে বড়ো কিছু নয়; তবে এটি পাওয়া বেশ ভালো হয়েছে তাঁর ও বাঙলা সাহিত্যের জন্যে। নইলে হয়তো বাঙালি বুঝতে পারতো না তিনি কতো বড়ো কবি!

রবীন্দ্রনাথের সম্বন্ধে তোমরা অনেক কিছুই জানো। যা জানো না, তা হয়তো জেনে ফেলবে আগামীকাল। তাই আমি তাঁর সম্বন্ধে–বলা যায়–কিছুই বলব না। ইচ্ছে করলে তার সম্বন্ধে অনেক কিছু তোমরা জানতে পারবে যে-কোনো পাঠাগারে গিয়ে। তোমরা পড়তে পারো প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা তার বিশাল জীবনীবই। বইটি চার খণ্ডে। বইটির নাম রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্রসাহিত্য প্রবেশক। বইটিকে সংক্ষেপে বলা হয় রবীন্দ্রজীবনী। এটি বিরাট বই; দেখলেই যদি ভয় লাগে, তবে পড়তে পারো প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়েরই লেখা আরেকটি বই, নাম রবীন্দ্রজীবনকথা। বেশি মোটা নয় বইটি, বেশ সরলভাবে লেখা। আমি শুধু রবীন্দ্রনাথের লেখা অধিকাংশ বইয়ের নাম জানিয়ে দিচ্ছি।

কবিতা

কবিকাহিনী (১৮৭৮), বনফুল (১৮৮০), ভগ্নহৃদয় (১৮৮১), সন্ধ্যাসঙ্গীত (১৮৮২), ছবি ও গান (১৮৮৪), শৈশব সঙ্গীত (১৮৮৪), ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (১৮৮৪), কড়ি ও কোমল (১৮৮৬), মানসী (১৮৯০), চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২), সোনার তরী (১৮৯৪), নদী (১৮৯৬), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কণিকা (১৮৯৯), কথা (১৯০০), কল্পনা (১৯০০), ক্ষণিকা (১৯০০), নৈবেদ্য (১৯০১), খেয়া (১৯০৬), শিশু (১৯০৯), গীতাঞ্জলি (১৯১০), স্মরণ (১৯১৪), বলাকা (১৯১৬), পলাতকা (১৯১৮), শিশু ভোলানাথ (১৯২২), পূরবী (১৯২৫), লেখন (১৯২৭), মহুয়া (১৯২৯), বনবাণী (১৯৩১), পরিশেষ (১৯৩২), পুনশ্চ (১৯৩২), বিচিত্রিতা (১৯৩৩), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), বীথিকা (১৯৩৫), পত্রপুট (১৯৩৬), শ্যামলী (১৯৩৬), খাপছাড়া (১৯৩৭), ছড়ার ছবি (১৯৩৭), প্রান্তিক (১৯৩৮), সেঁজুতি (১৯৩৮), প্রহাসিনী (১৯৩৯), আকাশপ্রদীপ (১৯৩৯), নবজাতক (১৯৪০), সানাই (১৯৪০), রোগশয্যায় (১৯৪০), আরোগ্য (১৯৪১), জন্মদিনে (১৯৪১), ছড়া (১৯৪১), শেষলেখা (১৯৪১),

স্ফুলিঙ্গ (১৯৪৫), বৈকালী (১৯৫১), চিত্রবিচিত্র (১৯৫৪)।

কাব্যনাট্য গীতিনাট্য ও নাটক প্রহসন

বাল্মীকিপ্রতিভা (১৮৮১), কালমৃগয়া (১৮৮২), মায়ার খেলা (১৮৮৮), রাজা ও রাণী (১৮৮৯), বিসর্জন (১৮৯০), রুদ্রচণ্ড (১৮৮১), প্রকৃতির প্রতিশোধ (১৮৮৪), নলিনী (১৮৮৪), গোড়ায় গলদ (১৮৯২), বৈকুণ্ঠের খাতা (১৮৯৭), হাস্যকৌতুক (১৯০৭), ব্যঙ্গকৌতুক (১৯০৭), শারদোৎসব (১৯০৮), প্রায়শ্চিত্ত (১৯০৯), রাজা (১৯১০), ডাকঘর (১৯১২), মালিনী (১৯১২), বিদায় অভিশাপ (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২), ফাঙ্গুনী (১৯১৬), গুরু (১৯১৮), অরূপরতন (১৯২০), ঋণশোধ (১৯২২), বসন্ত (১৯২৩), গৃহপ্রবেশ (১৯২৫), চিরকুমার সভা (১৯২৬), শোধবোধ (১৯২৬), নটীর পূজা (১৯২৬), রক্তকরবী (১৯২৬), ঋতুরঙ্গ (১৯২৭), শেষরক্ষা (১৯২৮), পরিত্রাণ (১৯২৯), তপতী (১৯২৯), নবীন (১৯৩১), কালের যাত্রা (১৯৩২), চণ্ডালিকা (১৯৩৩), তাসের দেশ (১৯৩৩), বাঁশরী (১৯৩৩), শ্রবণগাথা (১৯৩৪), নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬), চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্য (১৯৩৮), শ্যামা (১৯৩৯)।

উপন্যাস

করুণা (অসমাপ্ত, ১৮৭৭), বৌঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাড়ুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নিবন্ধ (১৯০৪), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুইবোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪), চার অধ্যায় (১৯৩৪)।

গল্প

ছোটগল্প (১৮৯৪), বিচিত্র গল্প (১৮৯৪), কথা চতুষ্টয় (১৮৯৪), গল্পদশক (১৮৯৫), কর্মফল (১৯০৩), গল্প চারিটি (১৯১২), গল্পসপ্তক (১৯১৬), পয়লা নম্বর (১৯২০), সে (১৯৩৭), তিনসঙ্গী (১৯৪০)। গল্পসল্প (১৯৪১)।

ভ্রমণকাহিনী

য়ুরোপপ্রবাসীর পত্র (১৮৮১), য়ুরোপযাত্রীর ডায়ারি (প্রথম খণ্ড ১৮৯১, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৯৩), জাপান যাত্রী (১৯১৯), যাত্রী (১৯০৮), রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১), জাপানে পারস্যে (১৯৩৬), পথে ও পথের প্রান্তে (১৯৩৮), পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)।

ভাষা ও সাহিত্যসমালোচনা

সমালোচনা (১৮৮৮), প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭), লোকসাহিত্য (১৯০৭), সাহিত্য (১৯০৭), আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭), শিক্ষা (১৯০৮), শব্দতত্ত্ব (১৯০৯), ছন্দ (১৯৩৬), সাহিত্যের পথে (১৯৩৬), বাংলাভাষা-পরিচয় (১৯৩৮), সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩)।

গান

রবিচ্ছায়া (১৮৮৫), গানের বহি ও বাল্মীকিপ্রতিভা (১৮৯৩), বাউল (১৯০৫), গীতিমাল্য (১৯১৪), গীতালি (১৯১৪), শাপমোচন (১৯৩১), বৈকালী (১৯৫১), প্ৰবাহিণী (১৯৫২)।

প্রবন্ধ : নানা রকমের

বিবিধ প্রসঙ্গ (১৮৮৩), রামমোহন রায় (১৮৮৫), আলোচনা (১৮৮৫), মন্ত্রী অভিষেক (১৮৯০), পঞ্চভূত (১৮৯৭), উপনিষদ ব্ৰহ্ম (১৯০১), আত্মশক্তি (১৯০৫), ভারতবর্ষ (১৯০৬), বিচিত্র প্রবন্ধ (১৯০৭), চারিত্রপূজা (১৯০৭), রাজাপ্রজা (১৯০৮), সমূহ (১৯০৮), স্বদেশ (১৯০৮), সমাজ (১৯০৮), ধর্ম (১৯০৮), শান্তিনিকেতন (১-৮ অংশ, ১৯০৯), বিদ্যাসাগরচরিত (১৯০৯), শান্তিনিকেতন (৯-১১ অংশ, ১৯১০), শান্তিনিকেতন (১২-১৩ অংশ, ১৯১১), শান্তিনিকেতন (১৪ অংশ, ১৯১৫), শান্তিনিকেতন (১৫-১৭ অংশ, ১৯১৬), সঞ্চয় (১৯১৬), কর্তার ইচ্ছায় কর্ম (১৯১৭), মানুষের ধর্ম (১৯৩৩), ভারতপথিক রামমোহন রায় (১৯৩৩), শান্তিনিকেতন (প্রথম খণ্ড ১৯৩৫, দ্বিতীয় খণ্ড ১৯৩৫), প্রাক্তনী (১৯৬), কালান্তর (১৯৩৭), বিশ্বপরিচয় (১৯৩৭), সভ্যতার সংকট (১৯৪১), আশ্রমের রূপ ও বিকাশ (১৯৪১), স্মৃতি (১৯৪১), আত্মপরিচয় (১৯৪৩), মহাত্মা গান্ধী (১৯৪৮), বিশ্বভারতী (১৯৫১), শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম (১৯৫১), সমবায়নীতি (১৯৫৪), ইতিহাস (১৯৫৫), বুদ্ধদেব (কয়েকটি প্রবন্ধ ও কবিতা এতে আছে, ১৯৫৬), খৃষ্ট (১৯৫৯)।

নিজের জীবনকথা

জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০)।

চিঠিপত্র

চিঠিপত্র (১৮৮৭), ছিন্নপত্র (১৯১২), ভানুসিংহের পত্রাবলী (১৯৩০), সুর ও সংগতি (১৯৫), চিঠিপত্র ১ (১৯৪২), চিঠিপত্র ২ (১৯৪২), চিঠিপত্র ৩ (১৯৪২), চিঠিপত্র ৪ (১৯৪৩), চিঠিপত্র ৫ (১৯৪৫), চিঠিপত্র ৬ (১৯৫৭), চিঠিপত্র ৭ (১৯৬০), ছিন্নপত্রাবলী (১৯৬০)।

বিবিধ রচনা

মহাত্মাজি এ্যান্ড দি ডিপ্রেসড হিউম্যানেটি (১৯৩২), লিপিকা (১৯২২), চিত্রলিপি (প্রথমটি, ১৯৪০), চিত্রলিপি (দ্বিতীয়টি, ১৯৫১)।

এছাড়াও তাঁর আরো কিছু রচনা রয়েছে। যদি তাঁর সব বইয়ের নাম জানতে ইচ্ছে হয়, তবে পুলিনবিহারী সেন রবীন্দ্রনাথের বইয়ের একটি তালিকা তৈরি করেছেন, সেটি দেখে নিও। ওপরে প্রতিটি বইয়ের নামের পাশের বন্ধনীর ভেতরে যে-অব্দগুলো দেয়া হয়েছে, তা বইগুলোর প্রথম প্রকাশের অব্দ, লেখার নয়।

রবীন্দ্রনাথের রচনার সংকলনগুলোর কথা

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন অনেক বই, কারো পক্ষে সবগুলো বইয়ের নাম মনে রাখা মুশকিল। এতো রকমের বই আর এতো রকমের নাম দেখে মাথা বিকল হয়ে যেতে চায়। রবীন্দ্রনাথের বইগুলো দিয়েই গড়ে তোলা যায় একটি বড়ো পাঠাগার। তিনি অজস্র বই লিখেছেন। হয়েছে তাঁর লেখার অজস্র সংকলন। সংকলনগুলোতে বিভিন্ন বই থেকে একই রকমের লেখা বাছাই করে ছাপা হয়েছে। এর ফলে তাঁর বইগুলোর ভেতর থেকে জন্মেছে আরো অনেক বই। রবীন্দ্রনাথের লেখার প্রথম সংকলন বের হয়েছিলো অনেক আগে, তখন তার বয়স মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর। সেটা ১৮৯৬। এ-সংকলনে ছাপা হয়েছিলো তাঁর বিভিন্ন বইয়ের অনেকগুলো কবিতা। এটির নাম ছিলো কাব্যগ্রন্থাবলী। এরপরে হতে থাকে তাঁর লেখার অনেক অনেক সংকলন। সে-সব সংকলনের মধ্যে যেগুলো খুব বিখ্যাত, তাদের কিছু নামের কথা বলছি, কিছু পরিচয়ও দিচ্ছি।

[১] কাব্যগ্রন্থাবলী (১৮৯৬)। এটি তাঁর প্রথম কাব্যসংগ্রহ। এর মধ্যে তার বিভিন্ন কাব্যের অনেক কবিতা মুদ্রিত হয়।

[২] গল্পগুচ্ছ। এর প্রথম খণ্ডটি বেরিয়েছিলো ১৯০০ অব্দে। গল্পগুচ্ছ আজকাল সকলের প্রিয় ও পরিচিত বই। রবীন্দ্রনাথের গল্পের বইগুলোর নাম আমরা অনেকেই করতে পারবো না। কেননা আজ সে-সব বই বিশেষ প্রচলিত নয়। আজকাল সবাই জানে যে রবীন্দ্রনাথের গল্পের বইয়ের নাম গল্পগুচ্ছ। আসলে এটি হলো তার গল্পগুলোর সংকলন বই। এর প্রথম খণ্ডটি বের হয় ১৯০০ অব্দে। ১৯০৮-১৯০৯ অব্দে তিনি তখন পর্যন্ত যতো গল্প লিখেছিলেন, সেগুলো গল্পগুচ্ছ নামে পাঁচ ভাগে বের হয়। প্রকাশ করেছিলো ইনডিয়ান প্রেস। ১৯২৬ অব্দে বিশ্বভারতী বের করে তিন খণ্ডে তার সবগুলো গল্প; তখনো এর নাম থাকে গল্পগুচ্ছ। আজ এ বইটিই নানারূপে বাজারে, লাইব্রেরীতে আছে।

[৩] কাব্যগ্ৰহ (১ থেকে ৯ ভাগ)। এটি কবির দ্বিতীয় কাব্যসংগ্রহ। বের হয়েছিলো ১৯০৩-১৯০৪ অব্দে। এ-সংকলনে তাঁর কবিতাগুলোকে সাজানো হয়েছিলো কবিতার বিষয় হিশেবে। প্রতিটি বিভাগের এক একটি নাম ছিলো। যেমন, যাত্রা, হৃদয় অরণ্য, বিশ্ব, সোনার তরী ইত্যাদি।

[৪] রবীন্দ্রহাবলী। এটি বের হয় ১৯০৪ অব্দে। এটিতে স্থান পায় তাঁর অনেকগুলো নাটক, উপন্যাস ও গল্প।

[৫] চয়নিকা (১৯০৯)। রবীন্দ্রনাথের ভালো ভালো অনেকগুলো কবিতা এ-বইতে সংকলিত হয়েছিলো। এ-জাতীয় কবিতা সংকলনের যে-বইটি আমরা আজ ব্যবহার করি, সেটি “সঞ্চয়িতা”। এ-বইটি আজকাল আর দেখা যায় না।

[৬] গীতবিতান। এটি রবীন্দ্রনাথের গানের সংগ্রহ। আজকাল ঘরেঘরে এটি দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথের গানের আরো কয়েকটি সংকলন হয়েছিলো, কিন্তু এটি সবার সেরা।

এটি প্রথম বের হয় ১৯৩১-এ।

[৭ সঞ্চয়িতা (১৯৩১)। রবীন্দ্রনাথের সব কাব্য থেকে কবিতা নিয়ে তৈরি হয়েছে এবইটি। এটি আজ আমাদের সকল সময়ের সাথী। বাঙলাদেশে কবিতা পড়ে এমন কে আছে যে এটি দেখে নি! এ-বইয়ের কবিতাগুলো চয়ন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ নিজে।

[৮] রবীন্দ্ররচনাবলী। এ-রচনাবলীতে সংগ্রহ করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সব বই। এর প্রথম খণ্ড বের হয়েছিলো ১৯৩৯ অব্দে। তারপর প্রতি বছর বের হতে থাকে রবীন্দ্ররচনাবলীর একেকটি খণ্ড। প্রতিটি খণ্ডে থাকে তার কয়েকটি কবিতা গল্প প্রবন্ধের বই, থাকে উপন্যাস। আজ পর্যন্ত আটাশটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের শেষ কবিতা

রবীন্দ্রনাথ অস্ত্রোপচারের ফলে মারা যান। অস্ত্রোপচার না হলে আরো কিছুদিন বাঁচতেন। অস্ত্রোপচারের কিছু আগে ১৯৪১-এর জুলাই মাসের ৩০ তারিখে সকাল সাড়ে নটায় লেখেন তিনি তাঁর শেষ কবিতা। কবিতাটির অংশ :

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে হে ছলনাময়ী।
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে সরল জীবনে।
এই প্রবঞ্চনা দিয়ে মহত্ত্বেরে করেছ চিহ্নিত,
তার তরে রাখ নি গোপন রাত্রি।

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসী ছিলেন। তবে মৃত্যুর আগে টলে গিয়েছিলো কি তাঁর বিশ্বাস? বিশ্বাস রাখা খুবই কঠিন, এমনকি রবীন্দ্রনাথের পক্ষেও।

০ প্রথাগতভাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষা লাভ করেন নি। গৃহশিক্ষক রেখেই বাড়িতে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

o তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।

o প্রথম জীবনে বিহারীলাল চক্রবর্তীর অনুসারী ছিলেন। তার কবিকাহিনী (১৮৭৮), বনফুল (১৮৮০), ভগ্নহৃদয় (১৮৮১) কাব্য তিনটিতে বিহারীলালের প্রভাব সুস্পষ্ট।

o তাকে প্রথম “বিশ্বকবি’ উপাধি দেন পন্ডিত রোমান ক্যাথলিক ব্রহ্ম উপাধ্যায়।

০ ১৮৭৮ সালে প্রথমবার ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন।

০ ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায় চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে ভরতারিণীর নাম হয়েছিল * মৃণালিনী দেবী”।

o ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ নামে একটি আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন যা ১৯২১ সালে ‘বিশ্বভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

10 হিন্দু মুসলমানের মিলনের জন্য ‘রাখি বন্ধন’ উৎসবের প্রচলন করেন।

o ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮) মারা যান।

সাহিত্যকর্ম

o রবীন্দ্রনাথ আট বছর বয়সে প্রথম কবিতা লিখেন। ১৮৭৪ সালে তের বছর বয়সে তাঁর কবিতা ‘অভিলাষ’ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় (সূত্র: বাংলাপিডিয়া), ‘হিন্দুমেলার উপহার’ অমৃতবাজার পত্রিকায় (সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান) প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সালে সতের বছর বয়সে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবি-কাহিনী’ প্রকাশিত হয়।

o রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে- ৫২টি কাব্য, ১৩টি উপন্যাস, ৩৮টি নাটক, ৩৬টি প্রবন্ধ, ৯৫টি ছোটগল্প, ১৯১৫টি গান।

• কবি-কাহিনী (১৮৭৮) প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। ভারতী পত্রিকায় পৌষ-চৈত্র ১২৮৪ সংখ্যায় এর কবিতাগুলি প্রকাশিত হয়।

• বনফুল (১৮৮০/১২৮৬ বঙ্গাব্দ)। এটি রবীন্দ্রনাথ লিখিত সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ কাব্য। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকাশিত কাব্য। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার আরো চার বছর পূর্বে রচিত হয়। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ পনের বছর বয়সে কাব্যটি লিখেন এবং ধারাবাহিকভাবে ১২৮২ অগ্রহায়ণ থেকে ১২৮৩ আশ্বিন- কার্তিক পর্যন্ত ‘জ্ঞানাঙ্কুর ও প্রতিবিম্ব (সম্পাদক শ্রীকৃষ্ণ দাস) নামক মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, চার বছর পর যখন গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় তখন তাঁর বয়স উনিশ।

• সন্ধ্যা সংগীত (১৮৮২)

• ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (১৮৮৯)। ব্রজবুলি ভাষায় রচিত পদাবলী।

* সোনার তরী (১৮৯৪)। এতে কবি তার জীবন ও কীর্তির ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের কথা বলেছেন।

• চৈতালী (১৮৯৬)

• চিত্রা (১৮৯৬)। এর বিখ্যাত কবিতা- ১৪০০ সাল, উর্বশী।

• কল্পনা (১৯০০)

• ক্ষণিকা (১৯০০)

• নৈবেদ্য (১৯০১)

• খেয়া (১৯০৬)। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করা হয়।

• গীতাঞ্জলি (১৯১০)। এ কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কাব্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই Song Offerings নামে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ইংরেজ কবি WB Yeats এর ভূমিকা লিখে দেন। যা ১৯১২ সালে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত হয়।

• বলাকা (১৯১৬)। গতিচেতনা বিষয়ক কাব্য। কাব্যটি উইলিয়াম পিয়রসনকে উৎসর্গ করা হয়। এতে মোট ৪৫টি কবিতা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কবিতা- সবুজের অভিযান, শর, ছবি, সাজাহান, বলাকা ইত্যাদি।

• পলাতকা (১৯১৮)। এতে নারীজীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলি তুলে ধরা হয়েছে।

• মানসী (১৯২০)

• কথা ও কাহিনী (১৯২০)

• পূরবী (১৯২৫)। আর্জেন্টিনার কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে উৎসর্গ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘বিজয়া’ বলে সম্বোধন করতেন।

• লেখন (১৯২৭)

• ময়া (১৯২৯)

• পুনশ্চ (১৯৩২)

• পরিশেষ (১৯৩২)

• বিচিত্রতা (১৯৩৩)

• শেষসপ্তক (১৯৩৫)

• শ্যামলী (১৯৩৬)

• পত্রপুট (১৯৩৬)

• ছড়ার ছবি (১৯৩৭)

• রোগশয্যায় (১৯৪০) • আরোগ্য (১৯৪১)

• জন্মদিনে (১৯৪১)

• শেষলেখা (১৯৪১) তার শেষ গ্রন্থ। মৃত্যুর পর প্রকাশিত।

উপন্যাস

• করুণা (১৮৭৭) – প্রথম লেখা উপন্যাস। উপন্যাসটি অসমাপ্ত, তাই একে পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হিসেবে গণ্য করা হয় না। ভারতী পত্রিকায় এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

• বৌঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩) প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। যশোরের রা প্রতাপাদিত্য ও বাকলার জমিদার রামচন্দ্রের বিবাদকে উপজীব্য করে রচিত একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। এটি ভারতী পত্রিকায় প্রথম ছাপা হয়। সৌদামিনী দেবীকে গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়। পরবর্তীতে এর কাহিনি অবলম্বনে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটক রচনা করেন।

• রাজর্ষি (১৮৮৭)। ত্রিপুরার রাজপরিবারের ইতিহাস নিয়ে রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস। ‘বালক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ উপন্যাসের প্রথমাংশ নিয়ে ‘বিসর্জন’ নাটক রচিত হয়।

• চোখের বালি (১৯০৩)। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। * নৌকাডুবি (১৯০৬) সামাজিক উপন্যাস ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় প্রকাশিত। হয়।

• প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮) একটি হাস্যরসাত্মক উপন্যাস। এর নাট্যরূপ “চিরকুমার সভা’ প্রহসন।

• গোরা (১৯১০) রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘতম উপন্যাস।

• ঘরে বাইরে (১৯১৬)। এটি চলিত ভাষায় লেখা রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস। বৃটিশ ভারতের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রচিত। ‘সুরজপত্র” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর উল্লেখযোগ্য চরিত্র- নিখিলেশ, বিমলা ও সন্দীপ। নিখিলেশ রাজবংশের যুবক অতিমাত্রায় অজাচারী, বিমলা সাধারণ ঘরের মেয়ে, সন্দীপ স্বদেশী আন্দোলনের নেতা।

  • চতুরঙ্গ (১৯১৬)। সাধু ভাষায় লিখিত সর্বশেষ উপন্যাস।

• যোগাযোগ (১৯২৯)। সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। মাসিক বিচিত্রায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশকালে নাম ছিল ‘তিন পুরুষ। উল্লেখযোগ্য চরিত্র- মধুসুদন ও কুমুদিনী ।

• শেষের কবিতা (১৯২৯)। এটি ১৯২৮ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ছাপা হয়। এ উপন্যাসে ভাষাবিদ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ আছে।

• দুইবোন (১৯৩৩)। চরিত্র- শর্মিলা উর্মিলা, শশাঙ্ক।

• মালঞ্চ (১৯৩৪)

• চার অধ্যায় (১৯৩৪, শেষ উপন্যাস)। সমসাময়িক বিপ্লবী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত একটি বিয়োগান্ত প্রেমের উপন্যাস।

নাটক

• কদ্ৰচণ্ড (১৮৮১)। ( অনেকের মতে এটি নাটক নয়, এতে সামান্য নাটকীয়তা আছে মা

• বাল্মীকি প্রতিভা (১৮৮১)। প্রথম প্রকাশিত নাটক।

• রাজা ও রাণী (১৮৮৯)

• বিসর্জন (১৮৯০) রাজর্ষি উপন্যাসের গল্পাংশ রচিত ।

• শারদোৎসব (১৯)

• ডাকঘর (১৯১২)

• অচলায়তন (১৯১২)

• মুক্তধারা (১৯২২)

• বসন্ত (১৯২৩)। এটি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেন।

• রক্তকরবী (১৯২৬)

• কালের যাত্রা (১৯৩২)। নাটকটি শরৎচন্দ্রকে উৎসর্গ করেন।

নৃত্যনাট্য :

নৃত্যনাট্য হলো গীতিনির্ভর নাট্যধর্মী নৃত্য। নানা কাহিনি অবলম্বনে এ নৃত্য নির্মিত হয়।

• চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২)

• নটার পূজা (১৯২৬)। এ নাটকে প্রথম অভিনয়ের সাথে নাচ ও গানের প্রয়োগ ঘটান।

• তাসের দেশ (১৯৩০) : নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করেন।

• চণ্ডালিকা (১৯৩৩)

• শ্যামা (১৯৩৯)

• মায়ার খেলা

• গোড়ায় গলদ (১৮৯২)

• বৈকুণ্ঠের খাতা (১৮৯৭)

• হাস্যকৌতুক (১৯০৭)

• চিরকুমার সভা (১৯২৬)। এটি ‘প্রজাপ্রতি নির্বন্ধ‘ উপন্যাসের নাট্যরূপ।

• শেষ রক্ষ

o প্রবন্ধ- বিবিধ প্রসঙ্গ (১৮৮৩), কালান্তর (১৯৩৭, রাজনৈতিক প্রবন্ধ সংকলন)।

o ছোটগল্প – রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের জনক। তার ছোটগল্পগুলো কাব্যধর্মী। রচিত ছোটগল্পের সংখ্যা ১৫টি।

• ভিখারিণী (১৮৭৪) বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প।

• দেনা পাওনা (১৮৯০)। বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্প।

প্রেমের গল্প-

• শাস্তি (১৮৯৩)। এই গল্পের নায়িকা চন্দরা। সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির, তবে তীব্র ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী চরিত্র এই চন্দরা।

• অধ্যাপক

• একরাত্রি। চরিত্র- সুরবালা।

• নষ্টনীড়। চরিত্র- চারুলতা (চারু)।

• পাত্র ও পাত্রী

• ল্যাবরেটরি

• সমাপ্তি। চরিত্র- মুন্নী। বিখ্যাত উক্তি- ‘শিশুরাজ্যে এই মেয়েটি একটি ছোটখাট বর্ণির উপদ্রব বলিলেই হয়।

• স্ত্রীর পর

• শেষকথা ও সামাজিক গল্প

• পোস্ট মাস্টার। চরিত্র- রতন। শাহজাদপুর কাচারি বাড়ির একতলায়। একটি পোস্ট অফিস ছিল। রবীন্দ্রনাথ শাহজাদপুরে আসলে সেখানকার পোস্ট মাস্টারের সাথে কথাবার্তা গাজর হতো। মূলত এই পোস্ট মাস্টারের জীবনের নানা দিক নিয়েই গল্পটি রচিত।

• হৈমন্তী। চরিত্র- হৈমন্তী, অপু। এতে যৌতুক প্রথা প্রাধান্য পেয়েছে। কাবুলিওয়ালা। চরিত্র- রহমত, মুকি। বিখ্যাত উকি- …. কিন্তু মঙ্গল আলোকে আমার শুভ উৎসব উজ্জ্বল হইয়া উঠিল।

• মুসলমানীর গল্প। এতে হিন্দু মুসলমান বিরোধের মূল কারণগুলো অনুসন্ধান করেছেন।

• ছুটি। চরিত্র- ফটিক। কিশোর চরিত্র

• দেনা পাওনা

• মেঘ ও রৌদ্র

• দান প্রতিদান

• অতিপ্রাকৃত গল্প

• ক্ষুধিত পাষাণ।

• জীবিত ও মৃত বিখ্যাত উক্তি- কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই।

• নিশীথে

• মণিহার

১ প্রকৃতি ও মানবসম্পর্কিত গল্প

• অতিথি

• আপদ

ভ্রমণকাহিনি :-

রবীন্দ্রনাথ মোট ১২ বার বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছেন। ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। সর্বশেষ সিংহল ভ্রমন (১৯৩৪) করেন। এসব ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলো বিভিন্ন বইয়ে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।

• যুরোপ প্রবাসীর পত্র (১৮৮১)। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থ তথা চলিত ভাষায় লেখা প্রথম গ্রন্থ।

• যুরোপ প্রবাসীর ডায়রি (১৮৯১)

• জাভা-যাত্রীর পত্র (১৯২৯)

• রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১)

• পারসো (১৯৩৬)

• পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)।

0 পত্র সংকলন

• ‘ছিন্নপত্র’ (১৯১২)। এতে মোট ১৫৩ টি পত্র আছে। এর প্রথম ৮টি পত্র শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে এবং ১৪৫টি পত্র ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে লেখা।

ভানুসিংহের পত্রাবলী‘ রানু অধিকারীকে লেখা।

“পথে ও পথের প্রান্তে নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা ।

o চিত্রকলা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় ৭০ ঊর্ধ্ব বয়সে

• ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ এর মধ্যে অঙ্কিত ছবি ও ভেচের সংখ্যা প্রায় নিজের আঁকা ছবিগুলোকে শেষ বয়সের প্রিয়া’ বলে আখ্যায়িত করতেন।

o আত্মজীবনী

• জীবনস্মৃতি (১৯১২)

• ছেলেবেলা (১৯৪০)

• আত্মপরিচয় (১৯৪৩)

0 সম্পাদিত পত্রিকা

• সাধনা (১৮৯১)। এ পত্রিকার আয়ু ছিল মাত্র চার বছর। প্রথম তিন বছর সম্পাদকের নাম ছিল রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথের ছেলে সুধীন্দ্রনাথের। চতুর্থ বছরে সম্পাদের নাম দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথের। তবে শুরু থেকেই এ পত্রিকার চালিকা শক্তি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

• ভারতী

• বঙ্গদর্শন

• তত্ত্ববোধিনী

• ভাণ্ডার

নোবেল পুরস্কার

o ১৯১৩ সালের নভেম্বর মাসে গীতাগুলী কাব্যের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

০ ২০০৪ সালের ২৪ শে মার্চ শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি উত্তরায়নের জাদুঘর থেকে নোবেল পুরস্কার পদক চুরি হয়। আজো তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়

o ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি লাভ করেন।

o ১৯১৫ সালে বৃটিশ সরকার তাকে ‘নাইট’ উপাধি দেয়। কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের (১৯১৯) প্রতিবাদে তিনি সে উপাধি বর্জন করেন। উপাধি প্রত্যাখ্যান পত্রে তিনি লর্ড চেমসফোর্ডকে লিখেছিলেন- ‘আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।

o ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি লাভ করেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন স্যার এ এফ রহমান।

০ ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ

রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ ছিলেন পীরালি ব্রাহ্মণ (বিধর্মীদের সংস্পর্শে এসে জাত হারানো ব্রাহ্মণরা হলেন পীরালি ব্রাহ্মণ)। তাঁর পূর্বপুরুষ জগন্নাথ কুশারীকে পিরালী ব্রাহ্মণ মেয়ে বিয়ের দায়ে হিন্দু সমাজচ্যুত করা হয়।

তার ছেলে পঞ্চানন কুশারী ১৮ শতকের শুরুতে খুলনার দক্ষিণডিহি থেকে কলকাতার গোবিন্দপুরে এসে জেলে পাড়ার পুরোহিত হিসেবে। কাজ করলে অনেকে ঠাকুর বলে ডাকেন।

এ কাজের পাশাপাশি তিনি ইংরেজদের বাণিজ্য ভরীতে দ্রব্য উঠা-নামানোর ঠিকাদারির কাজ করলে ইংরেজদের কাছেও ঠাকুর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং তাদের আনুকূল্য লাভ করেন।

তারই একজন উত্তর পুরুষ দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজদের কাছ থেকে অর্থের পাশাপাশি গ্রিন্স উপাধি লাভ করেছিলেন।। এভাবে শত বছরের ব্যবধানে জেলেদের পুরোহিত থেকে কলকাতার প্রভাবশালী পরিবারে পরিণত হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঢাকায়

o রবীন্দ্রনাথ ঢাকায় আসেন দুই বার।

০ ১৮৯৮ সালে প্রথম বার আসেন ঢাকায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে যোগ দিতে। সম্মেলনটি হয়েছিল ঢাকার ক্রাউন থিয়েটারে। তাঁর সফর সঙ্গী ছিলেন। সুরেন্দ্রনাথ, যোগেন্দ্রনাথ চৌধুরী প্রমুখ।

০ ১৯২৬ সালে দ্বিতীয় বার আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঢাকাবাসীর আমন্ত্রণে। ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উদ্দেশ্যে সফরসঙ্গীসহ নারায়ণগঞ্জে পৌঁছেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করেন। এ সময় ঢাকার বিভিন্ন সংঘঠনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

o ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ কার্জন হলে তাকে সংবর্ধনা। দেয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জি. এইচ. ল্যাংলি। সংবর্ধনাপত্র পাঠ করেন জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট ড. আর সি মজুমদার। সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বক্তৃতা দেন। বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল- The meaning of Art.

০ ১৩ ফেব্রুয়ারি কার্জন হলে দ্বিতীয় বক্তৃতা দেন। বিষয়বস্তু ছিল- The Rule of the Gaint.

০ ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় দিনে জগন্নাথ হলের ছাত্রদের অনুরোধে হল বার্ষিকী “বাসন্তিকা’র জন্য একটি গান লিখে দেন। গানটি ছিল-

এই কথাটি মনে রেখো

তোমাদের এই হাসি খেলায় আমি এই গান গেয়েছিলেম

জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়।

রবীন্দ্রনাথ স্মৃতি বিজড়িত জায়গা

o রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের খুলনায়। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জামিদারি ছিল। এ জমিদারী দেখার জন্যই রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসেছেন, অবস্থান করেছেন এবং সাহিত্য রচনা করেছেন। আনোয়ারুল করিম তার ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘স্থায়ীভাবে থাকার সময় ব্যতীত রবীন্দ্রনাথ মোট ৫০ বার বাংলাদেশে এসেছেন।

o দক্ষিণডিহি খুলনার ফুলতলা উপজেলার একটি গ্রাম। রবীন্দ্রনাথের মা সারদাসুন্দরী দেবীর জন্ম এই গ্রামে। তাছাড়া রবি ঠাকুরের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীও এই গ্রামের মেয়ে। তাদের বিয়েও হয়েছিল এই গ্রামে।

o শিলাইদহ : বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রাম। ১৮৮৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম শিলাইদহে আসেন। শিলাইদহ কুটিবাড়িতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছেন। সেখানেই ‘সোনার তরী’ কাব্য রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ ছেড়ে শান্তি নিকেতনে উঠেন।

o শাহজাদপুর সিরাজগঞ্জ জেলার একটি থানা। ১৮৯০ সালে প্রথম জমিদারী এস্টেটে পরিদর্শনে শাহজাদপুরে আসেন।

o পতিসর নওগা জেলার আত্রাই উপজেলার একটি গ্রাম। ঠাকুর জমিদারির কালিগ্রাম পরগণার সদর কাচারি ছিল পতিসরে। ১৮৯১ সালে প্রথম পতিসরে আসেন। ১৯৩৭ সালে শেষবার পতিসর পরিদর্শন করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম

o নজরুল তার ‘সঞ্চিতা‘ কাব্য সংকলনটি রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন।

o রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নজরুলের কবিতার সংখ্যা সর্বমোট ৮টি। এগুলো হল- তীর্থ পথিক, কিশোর রবি, অশ্রু-পুষ্পাঞ্জলি, ১৪০০ সাল, মৃত্যুহীন রবীন্দ্রনাথ, রবিহারা, রবির জন্ম তিথি এবং বিদায়।

o রবীন্দ্রনাথের আশিতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নজরুল ইসলাম অ-পুষ্পাঞ্জলী’ কবিতাটি লিখেন।

o রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু সংবাদ শুনার সাথে সাথে নজরুল লিখেন কবিতা ‘রবিহারা’ (দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্ত্র পথের কোলে, শ্রাবণের মেঘ ছুটে এল দলে দলে)

o রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নজরুলের লেখা গান- ‘ঘুমাইতে দাও শান্ত রবিরে আगान……

রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন

o রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের সাক্ষাৎ হয় মোট ৪ বার।

o প্রথমবার দেখা হয় ১৯২৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে। সে দিন আইনস্টাইন রবীকে চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বিকেলে কপুরে অবস্থিত আইনস্টাইনের বাসভবন ‘আইনস্টাইন ভিলায়’ যান। সে দিনে কথোপকথনের একটা অংশ New York Times পত্রিকায় ‘Einstein and Tagore Plumb the Truth’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদক ছিলেন জার্মানীর বিখ্যাত সাংবাদিক, আইনস্টাইনের মেয়ের জামাই দিমিত্রি মারিয়ান |

o দ্বিতীয় বার ১৯৩০ সালের ১৪ জুলাই মাসে জার্মানীতে, তৃতীয়বার ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং শেষবার ১৯৩০ সালের ১৫ ডিসেম্বর আমেরিকার নিউজ ইয়র্কে। এছাড়াও দুজনের মধ্যে অনেকবার পত্র বিনিময় হয়।

রবীন্দ্রনাথের গান জাতীয় সঙ্গীত

o আমার সোনার বাংলা’ গানটি রবীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষাপটে রচনা করেন। ‘স্বরবিতান‘ গীতিকাব্য গ্রন্থে সংকলিত।

o ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহারে এ গান জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা হয়।

o ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে এই গানের প্রথম দশ লাইনকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

রবী ঠাকুরের দেওয়া অনুপ্রেরণা উপহার

o কাজী নজরুল ইসলামের ‘ধূমকেতু‘ পত্রিকায় দু’লাইনের একটি অভিনন্দন বাণী।

প্রেরণ করেছিলেন- “আয়রে আয় ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ রে অগ্নিসেতু/দুর্দিনে এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয়কেতনা

o কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তকে ‘ছন্দের জাদুকর‘ উপাধি দেন।

o বিহারীলাল চক্রবর্তীকে ‘ভোরের পাখি‘ বলে আখ্যায়িত করেন।

o ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে ‘ভাষাচার্য‘ উপাধি দেন।

o গোলাম মোস্তফার প্রথম কাব্য ‘রক্তরাগ‘ প্রকাশিত হলে দু’লাইনের কবিতার মাধ্যমে তাকে অভিনন্দিত করেন- তব নব প্রভাতের রক্তরাগখানি মধ্যাহ্নে জাগায় যেন জ্যোতিময় বাণী।

o জীবনানন্দ দাশের কবিতা সম্পর্কে বলেছেন ‘চিত্ররূপময়।

o দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের ‘ঠাকুরমার ঝুলি‘র ভূমিকা লিখে দেন। o মুহম্মদ মনসুর উদ্দীনের ‘হারামনি‘র নামটি নির্বাচন করে দেন।

o মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের পত্রিকার নাম ‘সওগাত‘ নির্বাচন করে দেন। o বিদ্যাপতির কাব্যকে ‘রাজকন্ঠের মণিমালা‘ বলে অভিহিত করেছেন।

o অমিয় চক্রবর্তীর স্ত্রী জ্ঞানিশ কন্যা হিয়োর্ডিস সিগার্ড-এর নাম দিয়েছিলেন।

o অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের তরুণী অ্যালিস ভার্জিনিয়া ওন-এর নাম দেন ‘নীলা ।

o অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তকে ‘বেদে‘ উপন্যাসের জন্য পন্য মাধ্যমে অভিনন্দন জানান।

o মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোগী বিপ্লবী কল্পনা দত্ত যোশীকে ‘অগ্নিকন্যা‘ উপাধি দেন।

গ্রন্থ পরিচিতি

চোখের বালি :-

রবীন্দ্রনাথের মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস ‘চোখের বালি’ (১৯০৩)। উপন্যাসটি ৫০টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত। প্রথমে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। সমাজ ও যুগযুগান্তরাগত সংস্কারের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের বিরোধ এ উপন্যাসের মূল আলোচ্য বিষয়।

চোখের বালি উপন্যাসের নায়িকা বিনোদিনীর মহেন্দ্রর সাথে বিয়ে হওয়ার কথা থাকলেও মহেন্দ্র রাজি না হওয়ায় অন্যত্র বিয়ে হয় এবং অল্প দিনের মধ্যেই সে বিধবা হয়। পড়াশোনা করা সংস্কৃতিবান মেয়ে বিনোদিনী।

ঘটনাচক্রে বিনোদিনী মহেন্দ্রদের বাড়িতে আসলে তাকে দেখে মহেন্দ্র মুগ্ধ হয় এবং উপলব্ধি করে সমচেতনা সম্পন্ন জীবনসঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা। শিক্ষিত, সুন্দরী ও কর্মক্ষ বিনোদিনী চরিত্রকে রবীন্দ্রনাথ বিহারী চরিত্রের মাধ্যমে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত জীবনের সকল কোলাহল এড়িয়ে কাশীর নির্লিপ্ত জীবনে নিক্ষেপ করেছেন। উপন্যাসের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চরিত্র- আশালতা, রাজলক্ষ্মী ও অন্নপূর্ণা।

গোরা –

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাকাব্যিক উপন্যাস ‘গোরা‘। প্রবাসী পত্রিকায় ১৯০৮-১০ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯১০ সালে। এ উপন্যাসের নায়ক ‘গোরা সিপাহী বিদ্রোহের সময় নিহত এক আইরিশ দম্পতির সন্তান।

এক ব্রাহ্মণ পরিবারের গোয়ালে তার জন্য। অন্যের পরপরই মা মারা গেলে হিন্দু ব্রাহ্মণ দম্পতি কৃষ্ণদয়াল ও আনন্দময়ী তাকে পিতা-মাতা পরিচয়ে বড় করে। জন্ম-পরিচয় অজ্ঞাত গোৱা তার পালিত পিতা-মাতা না চাইলেও হিন্দু ধর্মের অন্ধ সমর্থক হয়ে উঠে।

গোরা কালক্রমে ইংরেজ বিরোধী বড় হিন্দু নেতা হয়ে যায়। জ্ঞানের নানা শাখায় বিচরণ সত্ত্বেও বর্ণপ্রথার কষ্টর অনুসারী সে। একসময় সে তার জন্ম পরিচয় জানতে পারে। পরে নির্দিষ্ট ধর্ম থেকে মানবতার ধর্মে নিজেকে সে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। শুরু হয় জীবনের এক নতুন অধ্যায়।

শেষের কবিতা :-

শেষের কবিতা (১৯২৯) লেখা ও প্রকাশের দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দশম উপন্যাস। ১৯২৮ সালে প্রবাসী পত্রিকায় ছাপা হয়। এতে রয়েছে ১৬টি কবিতা এবং ৩৯৪টি কাব্যচরণ। তাছাড়া এ উপন্যাসের গদ্যেও রয়েছে কার্যময়তা। তাই একে কাব্যপোন্যাসও বলা হয়।

উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অমিত রায়। ব্যারিস্টারি পড়তে বিলেত গিয়েছিল। তার বন্ধুর চেয়ে বান্ধবীর সংখ্যাই বেশি ছিল। এদের মধ্যে কেতকীর সাথে প্রেম হয় এবং কেতকী অমিতর দেওয়া আংটিও পরে।

ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরে অমিত শিলংয়ে বেড়াতে গেলে উপন্যাসের মূল নায়িকা লাবণ্যর সাথে পরিচয় হয়। অচিরেই বাস্তববাদী লাবণ্য বুঝতে পারে অমিত রোমান্টিক জগতের মানুষ, যার সঙ্গে প্রতিদিনের সংসারের হিসেব নিকেশ চলে না। তবু তাদের বিয়ের ठ ।

ইতোমধ্যে শিলংয়ে হাজির হয় কেতকী। ভেংগে যায় তাদের বিবাহ আয়োজন। শেষ পর্যন্ত অমিত স্বীকার করে যে লাবণ্যের সাথে তার প্রেম যেন ঝরণার জল প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য নয়।

আর কেতকীর সাথে সম্পর্ক ঘড়ায় তোলা জল, যা প্রতিদিনের পানের উদ্দেশ্যে। অমিত-কেতকী সংসার শুরু করে। আর লাবণ্য গ্রহণ করে তার পিতার ছাত্র শোভনলালকে। উপন্যাসটির যবনিকাপাত হয়েছে প্রাণস্পর্শী একটি কবিতা দিয়ে…… *কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও

উপন্যাসের কয়েকটি বাক্য আজ প্রবাদে পরিণত হয়েছে। যেমন- ফ্যাশনটা হলো মুখোশ স্টাইলটা হলো মুখশ্রী’, ‘পুরুষ আধিপতা ছেড়ে দিলেই মেয়ে আধিপত্য শুরু করবে, “বিধাতার রাজ্যে ভালো জিনিস অল্প হয় বলেই তা ভালো, ‘ভালোবাসা খানিকটা অত্যাচার চায় অত্যাচার করেও ইত্যাদি। ১৯৪৬ সালে ‘শেষের কবিতা উপন্যাসটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় Farewell, My Friend শিরোনামে।

গীতাঞ্জলি –

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলি‘। এই গ্রন্থে মোট ১৫৭টি গীতিকবিতা সংকলিত হয়েছে। কবিতাগুলো ব্রাহ্ম ভাবাপন্ন ভক্তিমূলক রচনা। ১৯০৮-০ সালের মধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়।

এরপর ১৯১০ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয়। পূজার ছুটিতে শিলাইদহ ও পরবর্তীতে শান্তিনিকেতন ও ঠাকুর বাড়িতে অবস্থান করার সময়ে লিখেছিলেন গীতাগুলি কাব্যের কবিতাগুলি। গীতের মাধ্যমে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে অগুলি প্রদান করা হয় বলে এর নাম ‘গীতাঞ্জলি‘। এতে গানে গানে স্রষ্টার প্রতি প্রার্থনা নিবেদন করা হয়েছে।

ডাকঘর:

রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কিত রূপক সাংকেতিক নাটক ‘ডাকঘর (১৯১২)। এ নাটকের নায়ক ঘরের মধ্যে বন্দি বালক অমল। কবিরাজ তার আয়ু বেশি দিন নেই বলে মনে করছে।

কবিরাজের বারণ মানতে সে আর স্কুলে যেতে পারে না। জানালার সামনে বসে থেকে তার দিন কাটে। তার মনপাখিকে উড়িয়ে নিয়ে যায় তাঁর প্রিয় দইওয়ালা। রক্ষীর কাছে সে শোনে পোষ্ট অফিসের গল্প। সে স্বপ্ন দেখে পো মাষ্টার হওয়ার এবং সে অপেক্ষা করতে থাকে রাজার চিঠির।

এদিকে কবিরাজের ঔষুধ তার শরীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে চলেছে ক্রমশ। নতুন কবিরাজ এসে সব দরজা জানালা খুলে দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তাতেও আর অমলকে ধরে রাখা সম্ভবপর হয় না। এ নাটকের প্রতীকি বাঞ্ছনায় এসেছে মুক্তির কথা। নাটকের উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলো হল- অমল, ঠাকুর্দা, সধা, দইওয়ালা প্রমুখ।

রক্তকরবী :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘রক্তকরবী‘ একটি সাংকেতিক নাটক। এই নাটকে রূপায়িত হয়েছে মানুষের লোভ কিভাবে জীবনের সব সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করে মানুষকে উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণে তথা নিছক যন্ত্রে পরিণত করে এবং তার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ কিরূপ ধারণ করে।

নাটকের সংক্ষিপ্ত কাহিনি- যক্ষপুরীর রাজার রাজধর্ম প্রজাশোষণ। তার অর্থলোভ দুর্দম। তার সে লোভের আগুনে পুড়ে মরে সোনার খনির কুলিরা। রাজার দৃষ্টিতে কলিবা মানুষ না, তারা স্বর্ণলাভের যন্ত্র মাত্র। যক্ষপুরীর লোহার জালের বাইরে প্রেম ও সৌন্দর্যের প্রতীক নন্দিনী সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।

এক মুহূর্তে সবাই চঞ্চল হয়ে উঠল। রাজা নন্দিনীকে পেতে চাইলেন যেমন করে সোনা আহরণ করেন, শক্তির বলে কেড়ে নিয়ে। কিন্তু প্রেম ও সৌন্দর্য এভাবে লাভ করা যায়। না। নন্দিনী রঞ্জনকে ভালবেসে তাই তার মধ্যে প্রেম জাগিয়ে তুলেছে। কিন্তু বন্ধনে বাঁধা। এ যন্ত্র তার প্রেমকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিন এটাই যান্ত্রিকতার ধর্ম।