Bivash Vlog

Find Your Dream Jobs

মাইকেল মধুসুদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)

মাইকেল মধুসুদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)

মাইকেল মধুসুদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) | Michael Madhusudan Dutt (1824-1873) মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন উনিশ শতকের নবজাগরণের যুগের মহাকবি, তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ।

মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি কপোতাক্ষ নদীর তীরবর্তী যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগড়দাঁড়ি গ্রামে এক কারও পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছদ্মনাম Timothy Penpoem (মাদ্রাজ ক্রনিকল পত্রিকায় এই ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন।) তিনি মহাকবি ও নাট্যকার। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত, মাতা জাহ্নবী দেবী।

o সাগরদাড়ির পাশের গ্রাম শেখপুরা মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। তার কাছে বাংলা, আরবি, ফারসি পড়েছেন। হিন্দু কলেজ ত্যাগ করে শিবপুরের বিশপস কলেজে ভর্তি হলে সেখানে গ্রিক, লতিন ও হিব্রু ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। এছাড়া ইংরেজি ও সংস্কৃতসহ ফরাসি, জার্মান এবং ইতালীয় ভাষায় দক্ষ ছিলেন। মধুসুদন ব্যুৎপন্ন ছিলেন বহু ভাষায়। মাতৃভাষা ছাড়াও তিনি ১২ টি ভাষা জানতেন।

প্রথম জীবনে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি ভার্জিল, দান্তে ও মিল্টনের মত কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কবি লর্ড বায়রনের সাহিত্যকর্ম ও জীবন দ্বারা। এ জন্য তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে সাহিত্য রচনা করতে চেয়েছিলেন।

o The Captive lady (1989). Visions of the Past রচনা করেন।

o ১৮৬২ সালে বিলেত যান। ১৮৬৩ সালে ব্যারিস্টারি পড়া বাদ দিয়ে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে বসবাস শুরু করেন। ১৮৬৭ সালে দেশে ফিরে আসেন।

o সাতিহ্য চর্চার দ্বিতীয় পর্বে তিনি বাংলায় সাহিত্য রচনা শুরু করেন।

o মামলা উপলক্ষে একবার ঢাকায় এসেছিলেন। তখন ঢাকার গুণগ্রাহী নাগরিকেরা তাকে সংবর্ধনার উত্তরে তিনি বলেন- ‘আমি শুধু বাঙালি নই, আমি বাঙাল। আর তা যদি ভুলে যাই, সেই জন্য আমার শোবার ঘরে একটি আয়না রেখেছি সে আয়না বলে দেয় যে আমি কৃষ্ণকায়

o ২৯ জুন ১৮৭৩ সালে কলকাতা আলীপুর হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর পনের বছর পর তাঁর নিজের লেখা সমাধি লিপি সমাধিক্ষেত্রে উৎকীর্ণ করা হয়। সমাধি লিপিটি হলো-

দাঁড়াও পথিকবর, জন্য যদি তব

বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল। এসমাধি স্থলে (জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম) মহীর পদে মহা নিদ্রাবৃত দত্ত কুলোদ্ভব কবি শ্রী মধুসূদন! যশোরে সাগর-দাঁড়ী করতক্ষ তীরে

জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি রাজ নারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী। “

‘দত্ত কুলোদ্ভব’ কবি

o মধুসূদন দত্ত ‘দত্ত কুলোয়ন কবি। বুল অর্থ বংশ, উদ্ভব অর্থ উৎপত্তি বা জন্ম “দখ কুলোদ্ভবা মানে দত্ত বংশে উৎপত্তি বা জন্ম। খৃষ্টীয় আঠার শতকে যশোরের। সাগরদাড়ি ঘামের দুর্দান্ত প্রতাপশালী বিত্তবান ব্যক্তি রামনিধি দত্ত। রামনিধি দত্তের চার পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ রাজনারায়ণ দত্ত। পেশায় ছিলেন উকিল। জমিদারীতেও। তার ব্যাপক সুনাম ছিল। রাজনারায়ণ দত্তের পুত্র হলেন মধুসূদন দত্ত ।।

মধুসূদন থেকে মাইকেল মধুসূদন

o সূর্য উঠতে ভুলে যেতে পারে, কিন্তু আমি- আমি ইংল্যাণ্ডে যাওয়ার কথা ভুলব না, ভুলতে পারব না। আর একবার ইংল্যাণ্ডে যেতে পারলে শ্রেষ্ঠ কবি আমি হবই।’ মধুসূদন এ কথাগুলো লিখেছিলেন বন্ধু গৌরিদাসকে। তখনো তিনি হিন্দু কলেজের

o ইংল্যান্ডে যাওয়া সুবিধা হবে এই আশায় তিনি ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ওল্ড মিশন চার্চে পাত্রী ডিলটির কাছে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। এ দিন থেকে তার নামের আগে ‘মাইকেল’ শব্দটি যোগ হয়। তার ধর্মান্তকরণ সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত তাকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। হিন্দু কলেজে খ্রিষ্টানদের অধ্যয়ন নিষিদ্ধ থাকলে হিন্দু কলেজ থেকেও তিনি বিতাড়িত হন।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি মধুসূদন

o মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলকে আমরা যে। 1 অর্থে বিদ্রোহী বলি মধুসূদন সে অর্থে বিদ্রোহী নয়। কাজী নজরুল রাজনৈতিক পরাধীনতা ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কবিতা লিখেন। আর মধুসূদন বাংলা সাহিত্য রচনার ধারার ক্ষেত্রে বিদ্রোহী। মধুসূদন প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্য রচনার ধারা ভেঙ্গে নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। একে একে অমিত্রাক্ষর ছন্দ, বাংলা সনেট, সার্থক মহাকাব্য, সার্থক ট্রাজেডি, সার্থক নাটক রচনা করেন।

সাহিত্যকর্ম

o মহাকাব্য মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১)। বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক মহাকাব্য। এর কাহিনি রামায়ণ থেকে সংগৃহীত। এতে ৯টি সর্গ আছে- অভিষেক, অন্তলাভ, সমাগম, অশোকবন, উদ্যোগ, বধ, শক্তিনির্তে, প্রেতপুরী ও সংক্রিয়া। এটি পাশ্চাত্য মহাকাব্যের মত বীররসাহিত। কাব্যের শুরুতেই দেবী বন্দনায় করি বলেছেন- “গাইব, মা, বীর রসে ভাসি, মহাগীত“। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করুণরসই প্রাধান্য পেয়েছে। এ গ্রন্থটি মুদ্রণের ব্যয়বহনকারী রাজা দিগম্বর মিত্রকে উৎসর্গ করা হয়। এ মহাকাব্যটি প্রথম ইংরেজিতে অনুবাদ করেন রাজনারায়ণ বসু।

কাব্য

দ্য ক্যাপটিভ লেডি (১৮৪৯)

তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৬০) তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত কাব্য। মহাভারতের সুন্দ ও উপসুন্দ কাহিনি অবলম্বনে রচিত। এ কাব্যটি যতীন্দ্রমোহন বাগচীকে উৎসর্গ করা হয়।

ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১)। কাব্যটির প্রথম নাম ছিল ‘রাধা বিরহ’। দীর্ঘদিন পর প্রকাশকালে নতুন নামকরণ হয় ‘ব্রজাঙ্গ

বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২) বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রকাব্য। এটি ইতালিয়ান কবি ওভিডিয়াস-এর The heroides or Epistle of the Heroines গ্রন্থের আদলে রচিত। ওভিডের কাব্যে ২১টি পত্র থাকলেও মধুসূদন ১১টি পত্রে কাব্য সমাপ্ত করেন। পুরানের এই এগারজন নারী চরিত্র- শকুন্তলা (দুষ্মন্তকে), তারা (সোমকে), রুক্মিণী (দ্বারকানাথ), কৈকেয়ী (দশরথ), সূর্পনখা (লক্ষণ), ভানুমতি (দুর্যোধন), দ্রৌপদী (অর্জুন), দুরলা (জয়দ্রথ), জাহ্নবী (শান্তনু), উর্বশী (পুনরবা) ও জনা (নীলফাজ স্বামী বা প্রেমিকের উদ্দেশ্যে এই পত্রগুলো লিখেন।

চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৬) এটি বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট কাব্য ইতালীয় কবি পেত্রাকের অনুসরণের এ কাব্য রচিত হয়। এতে প্রায় ১০২ টি সনেট রয়েছে। যার মাধ্যমে মধুসুদন দত্তের প্রবল দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে।

সনেট ইতালিয়ান শব্দ। একটিমাত্র অখণ্ড ভাবকল্পনা বা অনুভূতি যখন ১৪ অক্ষর সমন্বিত ১৪ টি পংক্তিতে একটি বিশেষ ছন্দরীতিতে আত্মপ্রকাশ করে তখন তাকে সনেট নামে অভিহিত করা হয়। সনেটের দুইটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে ৮টি ও দ্বিতীয় অংশে ৬টি পংক্তি থাকে। সনেটের প্রথম ৮ পংক্তিতের যে ভাবকল্পনার ইঙ্গিত করা হয় তাকে ‘অষ্টক’ বলে। পরবর্তী ৬ পংকি পূর্বোক্ত ভাবকল্পনার ব্যাখ্যা করে তাকে ‘ঘটক’ বলে। অষ্টক ও ঘটকের মধ্যবর্তী জায়গাকে বলে আবর্তন সন্ধি ।

সনেট মূলত তিন প্রকার- পেত্রার্কীয় সনেট, শেক্সপীয়রীয় সনেট, ফরাসি সনেট। এ তিন প্রকার সনেটের প্রধান পার্থক্য অন্ত্যমিলে।

হেক্টরবধ (১৮৭১) : এটি একটি অসমাপ্ত গদ্যকাব্য। গ্রন্থটি অসমাপ্ত অবস্থায়ই প্রকাশিত হয়। এতে মহাকবি হোমারের ইলিয়ড মহাকাব্যের কাহিনি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে। গ্রন্থটি অনুবাদধর্মী হলেও আক্ষরিক অনুবাদ না। অঙ্কটি ভূদের মধ্যেপাধ্যায়কে উৎসর্গ করা হয়।

নাটক

১৮৫৮ সালে কলকাতার বেলগাছিয়া নাট্যমঞ্চে রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘রত্নাবতী” নাটকের অভিনয় দেখে হতাশ হয়ে বলেন এহেন এক দুর্বল নাটকের জন্য রাজারা বিপুল অর্থ ব্যয় করছেন। তখন তিনি বাংলা মৌলিক নাটক রচনার অভাববোধ করেন। তিনি বাংলা নাটক রচনায় আগ্রহী হন। কেন তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে প্রবেশ করলেন তাও বললেন ‘শর্মিষ্ঠা‘ নাটকের প্রস্তাবনায়। লিখলেন-

কোথা বালল্মীকি ব্যাস

কোথা তব কালিদাস

কোথা ভবভূতি মহোদ

অলীক কুনাট্য রঙ্গে

মলে লোকে রাঢ়ে ও বঙ্গে

নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়

সুধারস অনাদরে

তাহে হয় তনু মনঃক্ষয়

মধুবলে জাগো মা গো

বিষ্ণু স্থানে এই মাগ

সুরসে প্রবৃত্ত হউক তব তনয় নিচয়

শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯) : বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি আধুনিক পাশ্চাত্য শৈলীতে রচিত প্রথম বাংলা নাটক। এর কাহিনি মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত রাজা যযাতি, শর্মিষ্ঠা ও দেবযানীর ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনি থেকে গৃহীত। এটি মহাকবি কালিদাসকে উৎসর্গ করেন।

পদ্মাবতী (১৮৬০) বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক কমেডি। এ নাটকে প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রিক পুরাণের প্রসিদ্ধ Apple of Discord এর ছায়া অবলম্বনে রচিত। গ্রিক পুরাণের দেবী জুনো, প্যালেস ও ভেনাস এ নাটকে হয়েছেন শচী, মুরজা ও রতি। হেলেন ও প্যারিস হয়েছেন পদ্মাবর্তী ও ইন্দ্রনীল। তিন দেবীর মধ্যে রতিকে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাচন করায় অন্য দুই দেবী ইন্দ্রনীলের উপর রুষ্ট হন এবং ইন্দ্রনীলের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। পরে দেবী রতির চেষ্টায় ই উদ্ধার পান এবং বিচ্ছিন্ন স্ত্রী পদ্মাবতীর সাথে তার মিলন ঘটে।

কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১) বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ট্রাজেডি। উইলিয়াম টডের ‘রাজস্থান’ নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।

মায়াকানন (১৮৭৪, অসমাপ্ত) তার সর্বশেষ বিয়োগান্তক নাটক। বেঙ্গল থিয়েটারের কর্ণধার শরত্চন্দ্র ঘোষের অনুরোধে তিনি নাটকটি রচনায় হাত দেন। তিনি শেষ করতে পারেন নি। শেষ করেছিলেন ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।

একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০)। এতে কলকাতায় নবা ইংরেজি শিক্ষিত ইয়ং বেঙ্গলদের অনাচারের কাহিনি হাস্য কৌতুকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রো (১৮৬১)। প্রথম নাম ছিল ‘ভগ্ন শিবমন্দির’। বুড়ো বয়সে ভীমরতিকে বাঙ্গ করে লেখা এই প্রহসন। এর মূল চরিত্র বুড়ো জমিদার শুরু প্রসাদ বানু। কথায় কথায় ধর্মের কথা বলেন। কিন্তু পাড়ার মেয়েদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকান। তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কয়েকজন মিলে একটা ফন্দি আটে। রাতের অন্ধকারে হানিফের ফাতেমার মাধ্যমে ভক্ত প্রসাদকে শিবমন্দিরের ধারে এনে উত্তম মধম দেয়।

প্রহসন : প্রহসন নাটকের মতই তবে নাটকের চেয়ে ছোট। এতে হাস্য ও ব্যঙ্গ বিদ্রূপের মাধ্যমে সমাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরা হয়। এতে নাটকের মত বিষয়বস্তুর জটিলতা, গভীর জীবনবোধ, চরিত্রের সমর্থতা থাকে না। প্রহসন হাসির নাটক, হালকা চালের নাটক।

কবিতা

• বঙ্গভাষা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট।

• কপোতাক্ষ নদ : চতুর্দশপদী কবিতাবলী কাব্যের অন্তর্গত।

বিষবারি পান করে

0 মধুসুদন বাংলা সাহিত্যে প্রথম • সার্থক মহাকাব্য রচয়িতা।

• আত্মবিলাপ : প্রথম ও খ্যাততম গীতিকবিতা ।

• বাংলা ভাষায় সনেট রচয়িতা। (পেত্রার্কীয় সনেট)

• অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক ।

• আধুনিক বাংলা কবিতার রচয়িতা/জনক।

• প্রহসন রচয়িতা।

o সম্পাদিত পত্রিকা ( মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত)

হিন্দু ক্রনিকল (প্রকাশের কিছু দিন পরেই অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায়। )

মেঘনাদবধ কাব্য :-

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত প্রথম বাংলা মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য“। হিন্দু পুরাণ সংস্কৃত মহাকাব্য ‘রামায়ণ‘-এর রাবণের সীতা হরণ, রাম-রাবণের লঙ্কাযুদ্ধ এবং যুদ্ধে রাবণের পরাজয়ের কাহিনি নিয়ে এ মহাকাব্য রচিত হয়েছে।

কবি ১৮৫৭ সালে সংঘটিত সিপাহী বিপ্লবের স্বাধীনতামন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে রামায়ণের বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গিতে অর্থাৎ রাবণকে নায়ক ও রামকে খলনায়ক হিসেবে রূপ নিয়ে রচনা করলেন স্বাধীনতাবিলাসী কাব্য। নয় সর্গে বিভক্ত ‘মেঘনাদবধ কাব্যে‘ বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ থেকে মেঘনাদ হত্যা, প্রমীলার চিতারোহণ পর্যন্ত মোট তিন দিন দুই রাতের ঘটনা বর্ণিত।

এ কাব্যের বিষয়বস্তু বাল্মীকির রামায়ণ থেকে গ্রহণ করলেও দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেছেন মিল্টনের প্যারাডাইজ লস্ট থেকে। বাল্মীকির রামায়ণে দেখানো হয়েছে লক্ষ্মন ও তার বানর বাহিনীর আক্রমণে প্রহরীদের বিপর্যস্ত হতে দেখে যজ্ঞ ত্যাগ করে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়ে মেঘনাদ মৃত্যুবরণ করে।

কিন্তু মধুসূদনের বর্ণনায় দেখা যায় নিরন্ত্র মেঘনাদ যখন অপরাজেয় হওয়ার জন্য অগ্নির পুঁজা করছিলেন, তখন লক্ষ্মণের হাতে অন্যায়ভাবে অপ্রস্তুত মেঘনাদ নিহত হয়। এর মাধ্যমে রাক্ষসদের ট্র্যাজিক ধীরে পরিণত করার যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলেন।

এর সঙ্গে তুলনীয় হোমারের ইলিয়ড় মহাকাব্যে যেমন গ্রীকদের হাতে ট্রয়ের পতন দেখানো হয়েছে। কাবে তিনি মিল্টনের দৃষ্টিভঙ্গীর পাশাপাশি অমিত্রাক্ষর ছন্দের আদর্শও গ্রহণ করেছেন।

একেই কি বলে সভ্যতা

বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক প্রহসন ‘একেই কি বলে সভ্যতা। তৎকালীন জমিদার বাবুরা গ্রামে প্রজাদের শোষণ করে আয়কৃত অর্থ দিয়ে পুত্রকে কলকাতায় পাঠান শিক্ষিত করে তোলার জন্য।

কিন্তু পুত্ররা মোসাহেবদের নিয়ে উৎসব করে বেড়ায়, মদের আসরে বারবিলাসিনীর নূপুরের শব্দ শুনতে যায়, ধর্ম জাত মানবিকতাবোধ আর মানব সম্পর্কের চিরায়ত শৃংখলা হারায় নেশার ঘোরে, ইংরেজ হওয়ার চেষ্টা করে।

মধুসুদন এসব চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন ‘একেই কি বলে সভ্যতা’র প্রধান চরিত্র নবকুমারের মাধ্যমে। কলকাতার আধুনিকতার আলোকে নবকুমার শিক্ষিত হচ্ছে। তার পিতা একজন পরম বৈষ্ণব এবং তিনি বৃন্দাবনেই থাকেন। একসময় তিনি কলকাতায় এসে বসত গড়েন।

এই সুযোগে নবকুমার কলকাতার নব্যশিক্ষিত যুবকদের নিয়ে ‘জ্ঞানতরঙ্গিনী সভা’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে- উদ্দেশ্য মদ্যপান ও বারবণিতা সঙ্গলাভ। একদিন নবকুমারের পিতা সন্দেহপরায়ণ হয়ে অনুচর বৈরাগীকে পাঠান রহস্য উদঘাটনের জন্য।

তার কাছে সব রহস্য প্রকাশ হয়ে পড়লে নবকুমার উৎকোচ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়। নবকুমার অধিক রাত্রে মদ্যপান করে মাতাল হয়ে প্রলাপ বকতে বকতে ঘরে ফিরে। পুত্রের এই পরিণতি দেখে নবকুমারের পিতা কলকাতার বসতি উঠিয়ে নিতে মনস্থ করেন। এই হলো একেই কি বলে সভ্যতার মূল বক্তব্য

কৃষ্ণকুমারী :

মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ট্রাজেডি নাটক ‘কৃষ্ণকুমারী‘ । নীলদর্পনের অব্যবহিত পরেই এটি প্রকাশিত হয়। এর কাহিনি উইলিয়াম টডের রাজস্থান নামক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

মহারাজা প্রতাপ সিংয়ের বংশধর, উদয়পুরাধিপতি মহারাজা ভীমসিংহের দুহিতা কৃষ্ণকুমারীর বিষাদময় জীবনই নাটকের বিষয়বস্তু। কৃষ্ণকুমারীর রূপেগুণে মোহিত হয়ে জয়পুরের লম্পটপ্রকৃতির রাজা লাৎসিংহ এবং মরুদেশের অধীশ্বর রাজা মানসিংহ তার পাণিপ্রার্থী হন। তারা উভয়ই প্রতিজ্ঞা করেন।

যে কৃষ্ণকুমারীকে না পেলে উদয়পুর ধ্বংস করে দিবেন। পরাক্রমশালী রাজাদের আক্রমণ থেকে নিজের রাজ্য রক্ষা করার সামর্থ তখন কৃষ্ণাকুমারীর পিতা ভীমসিংহের ছিল না।

কৃষ্ণকুমারীই সকল সমস্যার মূল মনে করে তিনি কৃষ্ণকুমারীকে হত্যার আদেশ দেন। পিতার মত জানতে পেরে চারুশীলা কৃষ্ণা বংশের মর্যাদা রক্ষার জন্য চুরিকাঘাত করে। আত্মহত্যা করেন। ইহাই কৃষ্ণকুমারীর ঐতিহাসিক কথা। নাটকটি মাইকেল মধুসুদন দত্ত। কেশববাবুকে উৎসর্গ করেন ।