Bivash Vlog

Find Your Dream Jobs

গবেষণা: গবেষণার সংজ্ঞা, ধারণা ও প্রকারভেদ

গবেষণা: গবেষণার সংজ্ঞা, ধারণা ও প্রকারভেদ

গবেষণার সংজ্ঞা:

কোনো সমস্যার বিপরিতে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার জন্য পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ উপায়ে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি প্রয়োগে ধারবাহিকভাবে উপাত্ত সংগ্রহ করে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়াকে গবেষণা বলে।

গবেষণার ধারণা

গবেষণা কথাটির সাথে ‘কোনো কিছু খোঁজা’ বা ‘অনুসন্ধান’ জড়িত রয়েছে। যদি ‘গবেষণা’ শব্দের দিকে লক্ষ্য করা হয় তাহলে দেখা যাবে এটি ‘গো’ এবং ‘এষণা’ শব্দ দুইটির মিলিত রুপ।

এখানে ‘গো’ শব্দটির অর্থ পৃথিবী এবং ‘এষণা’ শব্দটির অর্থ হলো অনুসন্ধান করা। এ হিসেবে গবেষণার অর্থ হলো পৃথিবী অনুসন্ধান।

তাহলে পৃথিবী অনুসন্ধান মানে কী? পৃথিবী অনুসন্ধান হলো- পৃথিবী, পৃথিবী সংশ্লিষ্ট বিষয়, পৃথিবীতে অস্তিত্ব, পৃথিবীতে বিচরণ করা করছে এমন সকল জীব, পৃথিবীতে একে অপররের ওপর নির্ভরশীলতা, পৃথিবীর নানান সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে কী, কেন, কোথায়, কীভাবে, কতটুকু ইত্যাদি প্রশ্নের অনুসন্ধান করা।

‘গো’ শব্দের আরেকটি অর্থ হলো কিরণ বা আলো। এ হিসেবে ‘গো’ এবং ‘এষনা’র মিলিত অর্থ। অর্থাৎ ‘গবেষণা’ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় ‘আলোর অনুসন্ধান’।

আলোর অনুসন্ধান মানে কী? এখানে কেন আলোর অনুসন্ধান করতে হবে? ‘গবেষণা’ প্রত্যয়টির মাধ্যমে কোন আলোর কথা বলা হয়েছে? সত্যিকার অর্থে এখানে যে আলোর কথা বলা হয়েছে তার সাথে সত্য, তথ্য ও যুক্তির আলো।

অর্থাৎ উপাত্ত বা তথ্য ও যুক্তির মাধ্যমে কোনো সত্যকে খোঁজার নাম হলো গবেষণা।

আবার বাংলাদেশের অনেক আলোচক ‘গবেষণা’ শব্দকে ‘গোরু খোঁজা’র সাথে তুলনা করছেন। তাঁদের যুক্তি হলো- যেহেতু ‘গবেষণা’ শব্দটি ‘গো’ ও ‘এষনা’র মিলিত রূপ এবং অভিধানে ‘গো’ শব্দের অন্য একটি স্পষ্ট অর্থ হলো গোরু, পাশাপাশি ‘এষণা’ মানে হলো অনুসন্ধান।

এ হিসেবে তাঁরা বলছেন যে, গোরু হারিয়ে যাওয়া মানে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হওয়া আর সে হারিয়ে যাওয়া গোরু ফিরে পাবার জন্য খোঁজা হলো ওই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা।

এ হিসেবে সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া অনুসন্ধান হলো গবেষণা।

বাংলা ‘গবেষণা’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘research’। Research শব্দটি দুটো আলাদা শব্দ ‘re’ এবং ‘search’ এর মিলিত রুপ।

আক্ষরিকভাবে এর অর্থ দাঁড়ায় পুনরায় অনুসন্ধান করা বা আবার খোঁজা। যেহেতু re শব্দের অর্থ পুনরায় বা আবার এবং search শব্দের অর্থ অনুসন্ধান করা বা খোঁজা।

এখানে একই বিষয় পর্যায়ক্রমিকভাবে বা ধারাবাহিকভাবে বারবার অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। এই হিসেবে গবেষণা হলো কোনো কিছু সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।

উল্লেখ্য, শাব্দিকভাবে re-search এবং research এর মধ্যে পার্থ্ক্য রয়েছে। Re-search (রি-সার্চ) অর্থ পুনরায় বা আবার খোঁজা। Research (রিসার্চ) অর্থ পদ্ধতিগত অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।

বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশেষ কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক উপাত্ত আহরণ করে তা বিচার-বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়া হলো গবেষণা।

গবেষণার প্রকারভেদ

উদ্দেশ্য, গভীরতা, বিশ্লেষণ, সময়, উপাত্ত ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গবেষণা বিভিন্ন রকমের হতে পারে, নিম্নে এগুলো উল্লেখ করা হলো-

উদ্দেশ্য অনুসারে গবেষণা

উদ্দেশ্য অনুসারে গবেষণা দুই ধরর

১. তাত্ত্বিক গবেষণা (Theoritical Reseach)

যে পদ্ধতিগত অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারিক প্রয়োগ নির্বিশেষে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা হয় তাকে তাত্ত্বিক গবেষণা বলে। তাত্ত্বিক গবেষণাকে বিশুদ্ধ গবেষণা (Pure Research), মৌলিক গবেষণা (Fundamental Research), প্রাথমিক গবেষণা (Primary Research) নামে চিহ্নিত করা হয়। তাত্ত্বিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্য হলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা।

যে ক্ষেত্রে কখনো গবেষণা হয়নি সে ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনা করা অথবা পূর্বে গবেষণা করা হয়েছে কিন্তু সেখানে বিশেষ পরিবর্তন বা নতুন কিছু সংযোজনের জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তা হলো মৌলিক গবেষণা বা তাত্ত্বিক গবেষণা।

২. ফলিত গবেষণা (Applied Research)

যে গবেষণার মাধ্যমে তাত্ত্বিক বা মৌলিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয় তা হলো ফলিত গবেষণা। ফলিত গবেষণার উদ্দেশ্য হলো তাত্ত্বিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণালব্ধ জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগ।

ফলিত গবেষণা দুই ধরর, যথা

i. প্রযুক্তিবিষয়ক ফলিত গবেষণা

প্রযুক্তিবিষয়ক ফলিত গবেষণা সাধারণত যন্ত্র, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ সম্পর্কিত হয়ে থাকে। উৎপাদনমুখী কাজে কীভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করা যায় বা ত্রুটিমুক্তভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় ইত্যাদি উদ্দেশ্য নিয়ে যে ফলিত গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে প্রযুক্তিবিষয়ক ফলিত গবেষণা বলে।

ii. বৈজ্ঞানিক ফলিত গবেষণা

বৈজ্ঞানিক ফলিত গবেষণা পরিচালিত হয় পূর্বানুমানের ভিত্তিতে। যে ফলিত গবেষণার উদ্দেশ্য হলো কোনো বিশেষ জিনিসের (পণ্য বা যে-কোনো কিছু) ব্যবহার উপযোগিতা এবং পরিবর্তনশীলতা নির্ণয় করা তা হলো বৈজ্ঞানিক ফলিত গবেষণা।

গভীরতা ও ক্ষেত্র অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণার গভীরতা ও ক্ষেত্র অনুসারে মোটামুটিভাবে চার ধরনের হয়ে থাকে, যথা

১. অনুসন্ধানী গবেষণা বা অন্বেষণমূলক (Exploratory Research)

পূর্বের কোনো গবেষণা হতে প্রাপ্ত জ্ঞান স্পষ্টভাবে বোঝা না গেলে বা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে, ওই বিষয় বা জ্ঞানের ওপর স্পষ্ট ধারণা অর্জন ও তার সঠিক ব্যবহার জানার জন্য যে পদ্ধতিগত বিজ্ঞানভিত্তিক ধারাবাহিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় তাকে অনুসন্ধানী গবেষণা বলে।

কোনো বিষয়ের ওপর পূর্বে পর্যাপ্ত গবেষণা পরিচালিত না হলেও সেক্ষেত্রে অনুসন্ধানী গবেষণা করা যায়। অনুসন্ধানী গবেষণা অনেকাংশেই তত্ত্ব ও সংগৃহীত নির্ভর হয়ে থাকে।

২. বর্ণনামূলক গবেষণা (Descriptive Research)

সমাজবিজ্ঞান গবেষণা শাখায় বহুল পরিচিতি একটি গবেষণা হলো বর্ণনামূলক গবেষণা। এতে নির্দিষ্ট সময়, ঘটনা, বিশ্বাস, প্রবণতা, প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বর্ণনা করা হয়। এ ধরনের গবেষণায় অনেক সময় পর্যাপ্ত উপাত্ত সংগ্রহ এবং অনুসন্ধান বা তদন্ত না করেই ফলাফল প্রদান করা হয়।

বর্ণণামূলক গবেষণা আবার বিভিন্ন ধরর হতে পারে, যেমন

i. জরিপ গবেষণা

কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে অনেকগুলো সমস্যা বা বিষয়বস্তুর ওপর ব্যাপক পর্যবেক্ষণ ফলাফল থেকে গাণিতিক বা পরিসংখ্যানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য উদ্ঘাটন করে অনুমিত সিদ্ধান্তের সত্যতা যাচাই হলো জরিপ গবেষণা। এটি পরিমাণগত গবেষণারও অন্তর্ভুক্ত।

ii. কেইস স্টাডি

কেইস স্টাডি (Case Study) এর বাংলা অর্থ হলো ঘটনা বিশ্লেষণ বা বিষয়ী অনুধ্যান। কেইস স্টাডির আরেক নাম জীবনেতিহাস। কেইস স্টাডি হলো সামাজিক একেকটি একক যেমন কোনো বিষয়, ব্যক্তি, দল, সমষ্টি, প্রতিষ্ঠান, ঘটনা ও অবস্থা সম্পর্কে জানার একটি প্রক্রিয়া।

iii. কর্মসহায়ক গবেষণা

কর্মসহায়ক গবেষণা মানে হলো এমন এক প্রকারের গবেষণা যা তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে করা হয়।

৩. ব্যাখ্যামূলক গবেষণা (Explanatory Research)

বর্ণনামূলক গবেষণাকে ভিত্তি করেই ব্যাখ্যামূলক গবেষণার উৎপত্তি। বর্ণনা এই গবেষণার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলেও ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আধুনিক গবেষণায় যত পদ্ধতির বা যত প্রকারের গবেষণা প্রচলিত, সে সবের মধ্যে বর্ণণামূলক গবেষণা অন্যতম।

যে গবেষণার মাধ্যমে কোনো কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে কারণ ও প্রভাব (cause-and-effect) সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে ব্যাখ্যামূলক গবেষণা বলে।

৪. সম্পর্কযুক্ত গবেষণা (Correlational Research)

যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে একাধিক চলকের মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিত করা হয় তা হলো সম্পর্কযুক্ত বা কোরিলেশনাল গবেষণা (correlational Research) ।

ব্যবহৃত উপাত্ত অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণায় ব্যবহার করা উপাত্ত অনুসারে গবেষণা তিন ধরনের। যথা-

১. গুণগত গবেষণা (Qualitative Research)

গুণগত গবেষণা সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা ধারার সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। যে গবেষণায় প্রয়োজনীয় উপাত্ত সরাসরি (first-hand) পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, প্রশ্নমালা, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় যার সব ই অগাণিতিক তাকে গুণগত গবেষণা বলে।

গুণগত গবেষণা করা হয় কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে, তুলনা করতে বা কখনো কখনো সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য। গুণগত গবেষণার ফলাফল গাণিতিক উপায়ে বা পরিসংখ্যানে প্রকাশ করা যায় না।

২. পরিমাণগত গবেষণা (Quantitative Research)

যে গবেষণায় ব্যবহৃত উপাত্ত সবসময় সংখ্যাসূচক হয় এবং গাণিতিক ও পরিসাংখ্যিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় তা হলো পরিমাণগত গবেষণা। একে সংখ্যাত্বক গবেষণাও বলে। এই গবেষণার একটি রুপ হলো জরিপ গবেষণা, যা বর্ণনামূলক গবেষণারও অন্তর্ভুক্ত।

৩. মিশ্র গবেষণা (Mixed-method Research)

যখন কোনো গবেষণায় গুণগত ও পরিমাণগত উভয় প্রকারের উপাত্ত ব্যবহার করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান অনুসন্ধান করা হয় তা হলো মিশ্র পদ্ধতির গবেষণা। মিশ্র গবেষণার উপাত্ত- ও ফলাফল গাণিতিক ও অগাণিতিক।

চলকের ব্যবহারগত দিক থেকে গবেষণার প্রকারভেদ

চলকের ব্যবহার ও ব্যবহারের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত গবেষণা তিন প্রকারের। যথা-

১. পরীক্ষণমূলক গবেষণা (Experimental Research)

নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ হলো পরীক্ষণ। যে গবেষণায় বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে সেখানে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে চলকের বৈশিষ্ট্য ও এক চলকের প্রতি অন্য চলকের প্রভাব নির্ণয় করা হয় তাকে পরীক্ষণমূলক গবেষণা বা পরীক্ষামূলক গবেষণা বলে।

২. অ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা (Non-experimental Research)

অ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা হিসেবেও পরিচিত, তবে এই পর্যবেক্ষণ কোনো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সম্পাদন হয় না। যে গবেষণার মাধ্যমে কোনো চলকের ওপর পর্যবেক্ষণ করে তার স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু গবেষকের সরাসরি হতক্ষেপ থাকে না তাকে অ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা বলে।

৩. অর্ধ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা (Quasi-Experimental Research)

বাস্তবেক্ষেত্রে পরীক্ষণমূলক গবেষণা পরিচালনা যখন অসম্ভব বলে মনে করা হয় তখন দ্বৈবচয়নের ওপর ভিত্তি না করে সমগ্রক থেকে বাছাই করে কয়েকটি দল গঠন করে প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে যে নকশা প্রণয়ন করে যৌক্তিক মীমাংসায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয় তা হলো অর্থ-পরীক্ষণমূলক গবেষণা বা আপাত-পরীক্ষণমূলক গবেষণা।

অনুমানের শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে গবেষণার প্রকারভে

গবেষণায় অনুমান ও এর শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে গবেষণা তিন প্রকার। যথা-

১. অবরোহী গবেষণা (Deductive Investigation)

পূর্বে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা থেকে বা বিবৃতি থেকে সমগ্রকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ সম্পর্কে ধারণা গঠন করা হয় তখন তাকে অবরোহী পদ্ধতির গবেষণা বলে। অবরোহী পদ্ধতি হলো সূত্র থেকে উদাহরণ গঠনের প্রক্রিয়া।

যেমন, ‘মানুষ মরণশীল’, এ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আশিক, তানজিল, আব্বাসেরও মৃত্যু হবে। এখানে মানুষ হলো সমগ্রক আর আশিক, তানজিল এবং আব্বাস হলো সমগ্রকের অংশ।

২. আরোহী গবেষণা (Inductive Research)

উদাহরণ থেকে সূত্র গঠন প্রক্রিয়া হলো আরোহী পদ্ধতি। সমগ্রকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে পর্যবেক্ষণ করে বা সূত্র হতে প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একটি সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়ার সাথে জড়িত গবেষণাকে বলা হয় আরোহী গবেষণা।

যেমন- আশিক, তানজিল এবং আব্বাসের মৃত্যু হলো; এখান থেকে সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায় যে, ‘মানুষ মরণশীল’।

৩. অনুসিদ্ধান্তমূলক অবরোহী গবেষণা (Hypothetical-Deductive Investigation)

যে গবেষণায় প্রথমে সত্যকে পর্যবেক্ষণ করে একটি অনুসিদ্ধান্তে আসা হয় এবং এর পরে অবরোহী পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে ফলাফল আসে তা অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাকে অনুসিদ্ধান্তমূলক অবরোহী গবেষণা বলে।

অতিবাহিত সময় অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণায় ব্যয়িত মোট সময়ের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা (Longitudinal Study)

অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা হলো একই চলককে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বারবার পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। এর আরেক নাম প্যানেল স্টাডি (Panel Study) ।

২. ক্রস-সেকশনাল স্টাডি (Cross-Sectional Study)

নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট কোনো সময়ের মধ্যে কোনো ঘটনা, ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির সামষ্টিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় তা হলো ক্রস-সেকশনাল স্টাডি।

তথ্যের উৎস অনুসারে গবেষণার প্রকারভেদ

গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্যের উৎসের আলোকে গবেষণা দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-

১. প্রাথমিক গবেষণা (Primary Research)

সরাসরি উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে যে গবেষণা পরিচালনা করা হয় তা হলো প্রাথমিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণা। তাত্ত্বিক গবেষণার মতোই এই গবেষণা পরিচালিত হয়। প্রাথমিক উৎস থেকে এই গবেষণার উপাত্ত ও সংগৃহীত হয় এবং তা ফার্স্ট-হ্যান্ড (first-hand) হয়ে থাকে।

২. মাধ্যমিক গবেষণা (Secondary Research)

মাধ্যমিক গবেষণা প্রাথমিক গবেষণার ঠিক বিপরীত। যে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় কোনো উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে মাধ্যমিক উৎস যেমন- সাময়িকী, গবেষণাপত্র, সংবাদপত্র, নথি, চিত্র, প্রতিবেদন ইত্যাদি থেকে উপাত্ত নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় তা হলো মাধ্যমিক গবেষণা।

সংগ্রহের ধরন অনুসারে গবেষণা

গবেষণায় ব্যবহৃত উপাত্ত আহরণের ক্ষেত্র ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা চার প্রকার। যথা-

১. ডকুমেন্টারি (Documentary)

ডকুমেন্টারিতে বেশিরভাগ সময় মাধ্যমিক উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ডকুমেন্টারি হলো কোনো বিদ্যমান উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাত্তকে নিয়মতান্ত্রিক পর্যালোচনা করে তা পরবর্তিতে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা অথবা পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত ফলাফলের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বিশেষে পৌঁছানো। গবেষণা-সাহিত্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ডকুমেন্টারি পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষণীয়।

২. ফিল্ড রিসার্চ (Fileld Research)

মাঠ গবেষণা বা ফিল্ড রিসার্চ হলো যে গবেষণায় সরাসরি ঘটনাস্থল থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে পরিচালিত গবেষণা কর্ম। প্রাথমিক গবেষণার মতোই মাঠ গবেষণা।

২. ল্যাবরেটরি গবেষণা (Laboratory Research)

পরীক্ষাগারে বা গবেষণাগারে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিভিন্ন চলকের মধ্যে সম্পর্ক ও প্রভাব নির্ণয়ের জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তা হলো পরীক্ষাগার গবেষণা, বা গবেষণাগার গবেষণা বা ল্যাবরেটরি রিসার্চ। পরীক্ষণ গবেষণাই ল্যাবরেটরি গবেষণার নাম।

৩. মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা (Mixed-Method: Documentary, Field and/or Laboratory)

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরি বা ল্যাবরেটরির বাইরে যে গবেষণাকর্ম পরিচালিত হয় তা হলো উৎসের ধরন অনুযায়ী মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা।

গবেষণায় উপাত্ত

গবেষণার প্রয়োজনে গবেষক নির্ধারিত বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোনো উৎস বা উৎস সমূহ থেকে যা কিছু আহরণ করেন তা উপাত্ত বা ডেটা (Data)। ডেটা বিন্যাস্ত বা অবিন্যাস্ত উভয়ভাবেই থাকতে পারে।

অনেকে বলেন যে, গবেষণায় উপাত্ত হলো গবেষণার উদ্দেশ্যে সংগৃহীত বা ব্যবহৃত সকল উপাত্ত ও তথ্য।

নোট: একটি গবেষণা শুধু একটি প্রকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে দুই বা ততোধিক প্রকারের হতে পারে।

কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুণ

কর্মসহায়ক গবেষণা কী

কর্মসহায়ক গবেষণা বা Action research হলো এমন এক ধরনের গবেষণা যা তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে করা হয়। কারো দক্ষতা বিষয়ক কোনো সমস্যার তুলনামূলকভাবে কার্যকরী সমাধানের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে কর্মসহায়ক গবেষণা বলে। কর্মসহায়ক গবেষণর মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তির বিদ্যমান অবস্থার বা কর্মদক্ষতার তুলনামূলক ইতিবাচক ও কার্যকর পরিবর্তন। এ ধরনের গবেষণা হয়ে থাকে পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট নির্ভর। পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিচারে সমস্যা নির্ধারণের পর তা সমাধানের উদ্দেশ্যে কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালিত হয় যা পর্যবেক্ষণযোগ্য অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কর্মসহায়ক গবেষণা সর্বদা অংশগ্রহণকেন্দ্রিক ও চলমান প্রক্রিয়া।

শিক্ষাবিদদের মতে কর্মসহায়ক গবেষণার সংজ্ঞা

সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মদক্ষতায় ত্রুটি বা সমস্যার দ্রুত ও কার্যকরী সমাধানের উদ্দেশ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যে গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে কর্মসহায়ক গবেষণা বলে।

স্টুয়ার্ট বলেছেন, “কর্মের উপযোগী গবেষণা হলো এমন একটি ধারাবাহিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ কোনো সামাজিক পরিবেশে তাদের নিজের অবস্থা অনুসন্ধান করে তা উন্নয়নের জন্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে”।

কেমিস ও ম্যাকট্যাগার্ট (Kemmis and McTaggart) ১৯৮৮ সালে কর্মসহায়ক গবেষণার সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে, “কর্মসহায়ক গবেষণা হলো একটি সমষ্টিগত, আত্মপ্রতিফলনমূলক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যা সমাজের সদস্যদের মাধ্যমে তাদের নিজেদের কার্য প্রক্রিয়া বা সামাজিক আচরণ বা চর্চার উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়”।

ইলিয়ট (১৯৯১) বলেছেন, “কর্মসহায়ক গবেষণা পেশাদারদের নির্দিষ্ট জটিলতর মানব পরিবেশে নিজ কার্যাবলির বিশ্লেষণ ও বিচারপূর্বক উন্নয়নের ক্ষমতা প্রদান করে”।

হার্বার্ট অ্যালরিকটার, পিটার পশ এবং ব্রিজেট সোমেখ তাঁদের লিখিত Teachers Investigate Their Work  (১৯৯৩) বইয়ে লেখেন, “কর্মসহায়ক গবেষণা এমন পদ্ধতি যা শিক্ষককে আত্মপ্রতিফলনের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো বিষয়ক সমস্যা ও বাধাসমূহ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। শিক্ষকগণ কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষণ-শিখন কার্যের মানোন্নয়নের সম্ভাব্য উপায় নির্ধারণে উদ্যোগী হন এবং বিদ্যালয় পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে সচেষ্ট হন”। এই তিন লেখক বইটিতে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণাকে সবচেয়ে জনপ্রয় পদ্ধতির একটি বলে চিহ্নিত করেন।

নির্বাচিত এই সংজ্ঞাগুলোর প্রতি খেয়াল করলে কর্মসহায়ক বা কার্যোপযোগী গবেষণার ধারণা সম্পর্কে সকলেই বেশ স্পষ্ট হয়ে যাবে।

কর্মসহায়ক গবেষণার পটভূমি

গবেষণা জগতে কর্মসহায়ক গবেষণা একটি নবতর সংযোজন যা সামাজিক গবেষণার অন্তর্ভুক্ত। ধারণা করা হয় বিশ শতকের গোড়ার দিকে কর্মসহায়ক গবেষণার উৎপত্তি। কুর্ট লুইন (Kurt Lewin) কে কর্মসহায়ক গবেষণার জনক বলা হয়।

১৯৪৬ সালে কুর্ট লুইন কর্মসহায়ক গবেষণার তিনটি নীতি; এবং সংজ্ঞা প্রদান করেন যার কারনে তাকে কর্মসহায়ক গবেষণার জনক বলা হয়। তিনি এই ধারণার অবতারণা করেন ১৯২০ সালে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন রকম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ, সামাজিক মনোবিজ্ঞানের উপস্থিতি, প্রশিক্ষণে দলগত প্রচেষ্টার সাফল্য, শিক্ষাবিদদের পরীক্ষণমূলক ও প্রগতিশীল শিক্ষা চিন্তার বিকাশ ইত্যাদির মধ্য দিয়েই কর্মসহায়ক গবেষণার ভিত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর উন্মেষ ঘটতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মসহায়ক গবেষণার সূত্রপাত ঘটে চল্লিশের দশকে। কর্মসহায়ক গবেষণার প্রবর্তক কুর্ট লুইন হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে এর ব্যবহার  প্রথম করেন স্টিফেন এম. কোরি।

চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসহায়ক গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করা হয় তবে শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার এই নবতর ধারাকে শিক্ষকদের জন্য প্রথম ব্যবহার করে দেখিয়েছেন ড. স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরি (Stephen Maxwell Corey) । স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরি ১৯৫৩ সালে ‘Action Research to Improve School Practices’ নামে একটি বই লেখেন যার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম কর্মসহায়ক গবেষণা প্রয়োগের সূচনা হয়।

১৯৫৩ সালে স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরির বিদ্যালয়ে কর্মসহায়ক গবেষণার ওপর লিখিত বইটি প্রকাশিত হওয়ায় পর থেকেই শিক্ষকমহলে কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পর্কে আগ্রহ বাড়তে থাকে। শিক্ষাক্রমের নকশা প্রণয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষায় বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমালোচনায় এই গবেষণা পদ্ধতিটি সাধারণ কৌশল হিসেবে ব্যবহারের ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই পঞ্চাশের দশককে সহযোগিতাভিত্তিক কর্মসহায়ক গবেষণার যুগ বলা হয়।

পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে এই কর্মসহায়ক গবেষণা নিয়ে অনেক শিক্ষাবিদ সমালোচনার খোলসে নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন যার ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগের আগ্রহ অনেকটা লোপ পায়। মাঝখানে একটি দশক ফেলে সত্তরের দশকে পুনরায় কর্মসহায়ক গবেষণার গুরূত্ব লাভ করে। ষাট ও সত্তরের দশকে কর্মসহায়ক গবেষণার ওপর গুরত্বারোপ করে একজন শিক্ষাবিদ লরেন্স স্টেনহাউস (Lawrenence Stenhouse) ‘teacher as researcher’ বা ‘গবেষক হিসেবে শিক্ষক’ এই ধারণার বিকাশে বেশ পরিশ্রম করেছেন। শ্রেণিকক্ষে কর্মসহায়ক গত ৩০-৪০ বছরে যেসব দেশ খুবই গুরুত্বের সাথে দেখেছে সেসবের মধ্যে অন্যতম, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন ইউরোপিয় দেশ।

কর্মসহায়ক গবেষণার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

এখানে কর্মসহায়ক গবেষণার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো

  • কর্মসহায়ক বা কার্যোপযোগী গবেষণার তিনটি প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করার চেষ্টা করে; এগুলো হলো- ‘কী, কেন এবং কীভাবে।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা কোনো না কোনো পরিস্থিতি নির্ভর হয়ে থাকে যা সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত সমস্যা চিহ্নিত করা এবং একই প্রেক্ষাপটেই তা সমাধান করার সাথে এটি জড়িত।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা একটি অংশগ্রহণকেন্দ্রিক গবেষণা যা বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সকলেই অংশগ্রহণ করেন।
  • শিক্ষক এককভাবে নিজে এবং অন্য কোনো গবেষকের সহায়তা নিয়ে উভয়ভাবে কর্মসহায়ক গবেষণা যায়। যদি অন্য কোনো গবেষকের সহযোগিতা নেওয়া হয় তাহলে সেই গবেষকের ভূমিকা হবে সহায়কের অর্থাৎ শিক্ষক সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে আর গবেষক তাকে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করবে ও দিক নির্দেশনা দিবে।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা সহযোগিতামূলক যেখানে গবেষক ও পেশাদার একত্রে একই সাথে কাজ করেন।
  • কর্মসহায়ক গবেষণার একটি একটি অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া হলো স্ব-মূল্যায়ন যা বিরাজমান পরিস্থিতিতে সমস্ত পরিবর্তন ও পরিমার্জন অব্যাহতভাবে মূল্যায়ন করে।
  • পদ্ধতিগত দিক বিবেচনায় কর্মসহায়ক গবেষণা একাধিক পদ্ধতিভিত্তিক। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে একাধিক পদ্ধতির সমন্বয় সাধন করা হয় যাতে যথার্থ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তা সমস্যার সঠিক সমাধান করা যায়।
  • কর্মসহায়ক গবেষনায় সংলাপ ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে সমস্যাকে বোঝার চেষ্টা করা হয় এবং সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা একমুখী নয়, বরং একাধিকমুখী; চক্রাকার হতে পারে।
  • কর্মসহায়ক গবেষণার নকশা নমনীয়, প্রয়োজন হলে গবেষণা চলমান অবস্থায়ও পরিবর্তন সম্ভব।
  • ছোটো থেকে বড়ো, অনুসন্ধানের মাধ্যমে যে-কোনো আকারের সমস্যা সমাধানের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালনা করা সম্ভব।

কর্মসহায়ক গবেষণার উদ্দেশ্য

সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা শাখার অন্তর্ভুক্ত বিশেষ এই গবেষণা অর্থাৎ কর্মসহায়ক গবেষোণার প্রধান দুই ধরনের উদ্দেশ্য রয়েছে, যথা- ১. কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতিকে বিস্তারিত ও গভীরভাবে জানা ও বুঝা এবং ২. প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নয়ন বা সমস্যার সমাধান করে বিদ্যমান ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন। প্রচলিত অন সকল গবেষণার মতোই কর্মসহায়ক গবেষণার উদ্দেশ্য শুধু নতুন জ্ঞানার্জণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়নে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা। এক কথায়, কর্মসহায়ক গবেষণার উদ্দেশ্য হলো তত্ত্ব (theory) ও চর্চার (practice) সমন্বয়সাধন।

শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণার গুরুত্ব

পেশাদার ব্যক্তি এবং শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে হলে এই গবেষণার প্রকৃতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। অল্প কথায় নিচের এর গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো:

  • কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে কোনো সমস্যার স্বরূপ, কারণ ও সমাধান পাওয়া যায়।
  • পেশাগত চর্চার বিদ্যমান অবস্থায় পরিবর্তন এনে এর উন্নয়ন ঘটানো কর্মসহায়ক গবেষণার কাজ।
  • কর্মসহায়ক গবেষণায় নিয়োজিত থাকা প্রত্যেক শিক্ষক বা প্রশাসকের মনে আত্মসমালোচনার মনোভাব গড়ে ওঠে যা পেশাগত উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক।
  • কর্মসহায়ক গবেষণায় জড়িত শিক্ষক পেশাগত দায়িত্ব, শিক্ষার্থীর শিখনমান এবং শ্রেণিকক্ষ কার্যাবলির মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
  • কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে একজন শ্রেণি শিক্ষক গবেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে উৎসাহিত হন; ফলে শিক্ষক তাঁর শিখন-শেখানো কার্যাবলির মান যাচাই করতে উদ্যোগী হন।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা শিক্ষক নিজের কর্মস্থলে সম্পন্ন করতে পারেন যে কারণে তিনি নিজস্ব সময় ও পরিকল্পনা অনুযায়ী গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন।
  • স্থানীয়ভাবে স্থানীয় ব্যক্তির মাধ্যমে কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পন্ন হয় বলে অন্যান্য গবেষণার মতো এই গবেষণার জন্য খুব বাড়তি খরচের প্রয়োজন হয় না।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা ধারাবাহিক এবং বহুমুখী পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয় বলে এর ফল দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা এতে অংশগ্রহণকারীদের আত্মপ্রত্যয়ী এবং প্রতিশ্রুতিশীল করে তোলে।
  • এই কর্মসহায়ক গবেষণা শিক্ষার্থীদেরকেও কার্যকর এবং মানসম্মত শিখনে সহযোগিতা করে।
  • গবেষক নিজেই নিজের সমস্যা নিয়ে গবেষণা করেন ফলে গবেষকের পক্ষে ঘটনা বুঝা এবং এর উন্নয়ন বা সমাধান করা সহজ হয়।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা ধারাবাহিক বলে ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষণ না সমস্যার সমাধান অর্জিত হয়।
  • গণতান্ত্রিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে স্থানীয় (বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রশাসক, ব্যবস্থাপক ইত্যাদি) সকলের অংশগ্রহণে সহযোগিতার ভিত্তিতে কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালিত হয় বলে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহমর্মিতার ভিত প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সংঘটিত মিথষ্ক্রিয়ার মানোন্নয়নে কর্মসহায়ক গবেষণা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

কর্মসহায়ক গবেষণার কাজ হলো পেশাগত কর্মদক্ষতার বিদ্যমান অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনে তা আরও কার্যকরী করা। একজন শ্রেণি শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম।

যে শিক্ষক কর্মসহায়ক গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত থাকেন তাঁর মনে খুব সহজেই আত্মসমালোচনার মনোভাব গড়ে যা তাঁর নিজ পেশার উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে একজন শ্রেণি শিক্ষক বুঝতে পারেন বা সনাক্ত করতে পারেন তাঁর শিখন-শেখানোর দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য কোন কোন প্রতিবন্ধকতা আছ, ফলে তাঁর পক্ষে পেশাগত উন্নয়ন ঘটানো সহজ হয়ে যায়।

আর এ ধরনের গবেষণা যেহেতু কর্মস্থলেই সম্পন্ন হয় সেহেতু শিক্ষক তার নিজস্ব সময় ও পরিকল্পনা অনুসরণ করে গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন। কর্মস্থলে পরিচালিত হয় বলে এই গবেষণার জন্য অতিরিক্ত খরচ খুব একটা প্রয়োজন হয় না।

একটি গণতান্ত্রিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে স্থানীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ও সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় বলে পারস্পরিক বোঝাপড়া বা সহমর্মিতার ভিত প্রতিষ্ঠিত হয় যা শিক্ষকের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

প্রশ্ন উঠতে পারে যে, স্থানীয় ব্যক্তি কারা? এখানে বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যক্তিরা হলো – শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রশাসক বা নির্দিষ্ট কর্মের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলে।

যে-কোনো ভাবেই হোক শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণায় দক্ষতা অর্জন করা এবং এর চর্চা করা খুব জরুরি। যেখানে শ্রেণিশিক্ষণের মান কার্যকর শিখনের জন্য উপযুক্ত নয় সেখানে শিক্ষার্থীর মধ্যে শিখন দক্ষতার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি শিক্ষকের ভূমিকাই মূখ্য, সেহেতু শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা খুব গুরুত্বপূর্ণ।