
কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) | Kazi Nazrul Islam Born: 24 May 1899, Churulia Died: 29 August 1976, Dhaka, Bangladesh
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) বুধবার প্রত্যূষে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার (তখনকার রানিগঞ্জ থানা) পুরনো শেরগড় পরগনার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ, মাতার নাম জাহেদা খাতুন। জাহেদা খাতুনের চার পুত্রের অকাল মৃত্যুর পর নজরুলের জন্ম হয় বলে তার নাম রাখা হয় ‘দুখু মিয়া’।
বাল্যকালে তাঁকে ‘তারা ক্ষ্যাপা’, ‘নজর আলী‘ নামেও ডাকা হতো। পরবর্তীতে ‘শুরু‘ নামও তিনি ব্যবহার করেছেন। সাহিত্যের সব শাখায় অবদান থাকলেও তিনি মূলত কবি হিসেবে পরিচিত।
o তাঁর পিতা ছিলেন এক মাজারের খাদিম ও ঐ মাজারের নিয়ন্ত্রনাধীন মসজিদের
o মাত্র ৮ বছর বয়সে পিতার মৃত্যু (১৯০৭) হলে চরম দারিদ্র্যে পতিত হন।
o ১০ বছর বয়সে গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাইমারি পরীক্ষায় পাশ করে, এখানেই ১ বছর শিক্ষকতা করেন।
o গ্রামের কয়েকজন মাতব্বর তাকে রানীগঞ্জের কাছে শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। স্কুল থেকে পালিয়ে আসানসোলে এক রুটির দোকানে কাজ নেন। কাজী রফিজউদ্দিন নামে সেখানকার এক দারোগা তাঁর গান শুনে নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন।
o ১৯১৪-র ডিসেম্বরে এখান থেকে পালিয়ে ফের শিয়ারশোল স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতেই ভর্তি হন। ভাল ছাত্র হওয়ায় স্কুলের বেতন মাফ ও বিনামূল্যে বোর্ডিংয়ে থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা হয়।
o এর পূর্বে অল্প সময়ের জন্য একটি লেটো (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমান নাট্যদল) দলে যোগ দেন। তার চাচা কাজী বজলে করিম লেটো দলের ওস্তাদ ছিলেন। ধারণা করা হয় তার প্রভাবে কাজী নজরুল লেটো দলে যোগ দেন। নজরুলের লেটোগানে পারদর্শিতা দেখে সে সময়কার লেটোদলের বিখ্যাত কবিয়াল শেষ ঢাকার তাঁকে ‘ব্যাঙাচি বলে ডাকতেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটারে কাজ করার সুবাদে কবিতা, নাটক ও সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন।
o বাংলা ভাষায় তিনি প্রথম ইসলামী গান বা গজল রচনা করেন। এছাড়াও তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামাসঙ্গীত ও হিন্দু ভক্তিগীতি রচনা করেন। তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় ৩০০০ এবং অধিকাংশ তিনি নিজে সুরারোপ করেছেন। এখন এগুলো নজরুল সঙ্গীত বা নজরুল গীতি নামে পরিচিত।
o বাংলা সাহিত্যে মুক্তক ছন্দের প্রবর্তক।
o ১৯৪২ সালের ৯ জুলাই ‘পিক্স ডিজিজ’ নামক নিউরণঘটিত দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ক্রমশ চিরতরে বাকশক্তি হারান। এক পর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন।
o ২৯ শে আগস্ট ১৯৭৬ (১৩৮৩ বঙ্গাব্দ ১২ ভাদ্র) সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে ৭৭ বছর বয়সে ঢাকার পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিকেল সাড়ে চারটায় শোক মিছিল সহকারে কফিনে মোড়ানো কবির মরদেহ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্মরণাতীত কালের এক বিশাল জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ও সামরিক মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে কবিকে সমাহিত করা হয়।
সাহিত্যকর্ম
0 বাউগুলের আত্মকাহিনী নজরুলের প্রথম রচনা। ১৯১৯ সালে সওগাত পত্রিকার।
মে-জুন সংখ্যায় প্রকাশিত হয় । o নজরুলের প্রথম প্রকাশিত-
মুক্তি (শ্রাবণ, ১৩২৬ বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকায়)
কবিতা
ব্যাথার দান (ফেব্রুয়ারি, ১৯২২)
অগ্নি-বীণা (সেপ্টেম্বর, ১৯২২)
উপন্যাস বাঁধনহারা (১৯২৭)
প্রবন্ধ তুর্কমহিলার ঘোমটা খোলা (কার্তিক, ১৩২৬ সওগাত পত্রিকায়)
নাটক
যুগবাণী (অক্টোবর, ১922) ঝিলিমিলি (১৩৩৪)
বাজেয়াপ্ত গ্রন্থ – যুগবাণী
মধুমালা (১৯৬০)
উপন্যাস
• বাঁধনহারা (১৯২৭)
• ব্যথার দান (১৯২২)
• রিভের বেদন
• মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩০)
• কুহেলিকা (১৯৩১)। এর মূল চরিত্র জাহাঙ্গীর। উপন্যাসে সকলে তাকে ‘উলগুলুল’ বলে ডাকে। ‘উলকলুল‘ উর্দু শব্দ, অর্থ- বিশৃঙ্খল, এলোমেলো।
• শিউলিমালা
• পদ্মগোখরা
• জিনের বাদশা
o নজরুলের কাব্যের সংখ্যা মোট ২২টি কাব্য (বিদ্রোহ প্রধান)-
নাটক
• অগ্নিবীণা (১৯২২)। প্রথম কাব্যগ্রন্থ। উৎসর্গ- বারীন্দ্রকুমার ঘোষ।
• ঝিলিমিলি (১৯৩০)
• বিষের বাঁশি (১৯২৪)। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয় এদেশের নারী অধিকার আন্দোলনের নয়িকা মিসেস এম. রহমানকে (মোসাম্মদ মাসুদ ान) ।
• আলেয়া (১৯৩১)
• পুতুলের বিয়ে (১৯৩৩)
• ভাঙার গান (১৯২৪)। মেদিনীপুরবাসীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়।
• সাম্যবাদী (১৯২৫)
• সর্বহারা (১৯২৬)। উৎসর্গ করা হয় বিরজাসুন্দরী দেবীকে।”
• যুগবাণী (১৯২২) প্রথম প্রবন্ধ গ্রন্থ।
• দুর্দিনের যাত্রী (১৯২৬)
• সঞ্চিতা (১৯২৮) বিভিন্ন কাব্যের বাছাইকৃত কবিতা সংকলন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গ করা হয়।
• রুদ্রমঙ্গল (১৯২৭)
গানের সংকলন
• জিরি (১৯২৮)
• বুলবুল
• সন্ধ্যা (১৯২৯)। উৎসর্গ মাদারীপুর শান্তিসেনা।
• চোখের চাতক
• প্রলয়শিখা (১৯৩০)
• চন্দ্ৰবিন্দু
• নির্ঝর (১৯৩৮),
• নজরুলগীতি
• নতুন চাঁদ (১৯৪৫)
• গুলবাগিচা
• গীতি শতদল
• ঝড় (১৯৬০)
• সুরলিপি
কাব্য (প্রধান)
• দোলনচাপা (১৯২)
• সুরমুকুল
• গানের মালা
• ছায়ানট (১৯২৫)। উৎসর্গ – মুজাফ্ফর আহমদ ও কুতুবউদ্দীন আহমদ।
• পূর্বের হওয়া (১৯২৫)
• বনগীতি। সুর সাকী
• ঝিঙেফুল (১৯২৬)। ছোটদের জন্য লিখিত কবিতা। উৎসর্গ- বীর বাদল।
সম্পাদিত পত্রিকা
• সিন্দু হিন্দোল (১৯২৭), উৎসর্গ – হাবীবুল্লাহ বাহার ও শামসুন্নাহার মাহমুদ
• দৈনিক নবযুগ (১৯২০)
• চক্রবাক (১৯২৯)। চট্টগ্রাম অবস্থানকালে লেখা অধিকাংশ কবিতা এতে স্থান পায়। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের (ঢাকা কলেজ) অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রকে উৎসর্গ করেন।
• ধূমকেতু (১৯২২)।
• লাঙল (১৯২৫)
• শেষ সওগাত (১৯৫৮)। এ কাব্যের ভূমিকা লিখেন প্রেমেন্দ্র মিত্র।
পুরস্কার / কাব্য (জীবনীমূলক)
• কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘জগত্তারিণী‘ (১৯৪৫) পুরস্কার।
• ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ‘ পদক (১৯৬০)।
• মরুভাস্কর (১৯৫১) হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী নিয়ে চারটি সর্গে ১৮টি খণ্ড-কবিতা নিয়ে এই কাব্যগ্রন্থ।
• রবীন্দ্রভারতী থেকে ‘ডি-লিট‘ (১৯৬৯)।
• চিত্তনামা (১৯২৫) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনভিত্তিক। এটি উৎস করা হয় চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডি-লিট‘ (১৯৭৪)
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘একুশে পদক‘ (১৯৭৬)।
বিখ্যাত প্রবন্ধ
• রাজবন্দীর জবানবন্দী। (১৯২৩) আনন্দময়ীর আগমনে কবিতা প্রকাশের জন্য তাকে গ্রেফতার করা হলে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন সেটাই ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী (৭ জানুয়ারি ১৯২৩ সালে লেখা)। এ প্রবন্ধে তিনি নিজেকে ‘বিদ্রোহী কবি‘ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন- “শুনেছি, আমার বিচারক একজন কবি। নে আনন্দিত হয়েছি। বিদ্রোহী কবির বিচার বিচারক কবির নিকট ।“
• যৌবনের গান ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জে মুসলিম যুব সমাজ কাজী নজরুল ইসলামকে অভিনন্দন জানাতে গেলে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তারই পরিমার্জিত ও লিখিত রূপ যৌবনের গান“। এ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন- “তারুণ্য দেখিয়াছি আরবের বেদুইনদের মাঝে, তারুণ্য দেখিয়াছি মহাসমরে সৈনিকের মুখে, কালাপাহাড়ের অসিতে, কামাল-করিম- মুসোলিনি-সানইয়াৎ- লেলিনের শক্তিতে।“
• মসজিদ ও মন্দির। এ প্রবন্ধটি Joseps T. O’Connell অনুবাদ করেন The Temple and The Mosque শিরোনামে। এটি ১৯৭৪ সালে টরেন্টোর সেন্ট মাইকেল কলেজ জার্নালে প্রথম প্রকাশিত হয়।
বিখ্যাত কবিতা
• প্রলয়োল্লাস। এটি অগ্নিবীণা কাব্যের প্রথম কবিতা ।
• বিদ্রোহী। ১৯২২ সালে ৬ জানুয়ারি ‘বিজলী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ কবিতার জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
• রক্তাম্বরধারিনী মা। এ কবিতার জন্য অগ্নি-বীণা কাব্যগ্রন্থটি নিষিদ্ধ হয়। • রবি হারা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুতে শোকার্ত হয়ে লিখেছেন।
• আনন্দময়ীর আগমনে। এ কবিতার প্রকাশের জন্য নজরুলের এক বছর জেল হয়েছিল।
• দারিদ্র। কবিতাটি সিন্দু হিন্দোল কাব্যের অর্ন্তগত।
• প্রলয় শিখা। এ কবিতার জন্য নজরুল ছয় মাস কারাবন্দী ছিলেন।
• খেয়াপারের তরণী। ঢাকার নবাব আহসানুল্লাহর মেয়ে মেহেরবানু খানমের আঁকা একটি ছবি দেখে নজরুল রচনা করেন খেয়াপারের তরণী’ কবিতা।
• মানুষ। এ কবিতার চরণ- কোথা চেঙ্গিস, গজনী মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়? এখানে কবি কালাপাহাড়কে প্রচলিত ধর্ম ও সংস্কার- বিদ্বেষী ছিলেন বলে স্মরণ করেছেন।
নজরুলের বাজেয়াপ্ত গ্রন্থ
o সাহিত্য সমালোচক শিশির কর নির্ধিদ্ধ নজরুল’ গ্রন্থে নজরুলের পাঁচটি গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেছেন-
• যুগবাণী। নিষিদ্ধ হয় ২৩ নভেম্বর ১৯২২।
• বিষের বাঁশি। নিষিদ্ধ হয় ২২ অক্টোবর ১৯২৪
• ভাঙার গান। নিষিদ্ধ হয় ১১ নভেম্বর ১৯২৪
• প্রলয় শিখা। নিষিদ্ধ হয় ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩০।
• চন্দ্রবিন্দু। নিষিদ্ধ হয় ১৪ অক্টোবর ১৯৩১। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৫ ।
এ গ্রন্থগুলো ছাড়াও আরো কিছু গ্রন্থের উপর সরকারের আক্রোশ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করা হয় নি। এগুলো হল- অগ্নি-বীণা, সঞ্চিতা, ফনিমনসা, সর্বহারা, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্রমঙ্গল, কুহেলিকা। উল্লেখ্য যে, গ্রন্থ হিসেবে অগ্নি-বীণা কাব্যটি কখনো নিষিদ্ধ করা হয় নি। এ কাব্যের ‘রক্তাম্বরধারিনী মা’ কবিতাটি নিষিদ্ধ হয়।
সৈনিক কবি নজরুল
০ ১৯১৭ সালের শেষদিকে মেট্রিক পরীক্ষার ঠিক পূর্বমুহূর্তে ৪৯নং বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন। তখন বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
o প্রশিক্ষণের জন্য প্রথমে কলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম, পরে সীমান্তবর্তী শহর নওশেরা (পেশোয়ারের একটি মহকুমা) যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে আসেন। সৈনিক জীবনের বাকী সময় করাচিতেই কাটে।
o উক্ত রেজিমেন্টের এক মৌলভীর কাছে ফার্সি শিখেন।
o সাধারণ সৈনিক থেকে খুব অল্প সময়ে ল্যাগ নায়েক, নায়েক ও হাবিলদার হন। হাবিলদার পদে উন্নীত হলে তাকে ‘ব্যাটালিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
o নজরুলের সাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি করাচি সেনানিবাসেই। সেখানেই বসেই লিখেন- গল্প : বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী, ব্যথার দান, মেহের নেগার, হেনা। কবিতা- মুক্তি, প্রবন্ধ- তুর্ক মহিলার ঘোমটা খোলা।
o প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য নজরুল বাহিনী ইরাক যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় যাওয়া হয় নি। o ১৯২০ সালে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং নজরুল সৈনিক জীবন ত্যাগ করেন। ১৯২০ সালে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর নজরুল সেনাবাহিনীতে ছিলেন।
নজরুলের দাম্পত্য জীবন
o কুমিল্লার দৌলতপুরে থাকাকালে আলী আকবর খানের বোনের মেয়ে সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিসের সাথে কবির সখ্য হয়। ১৯২১ সালের ১৮ জুন নজরুল- নার্গিসের বিবাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু কাবিনের শর্তে আলী আকবর খান নজরুলকে ঘরজামাই থাকার শর্ত জুড়ে দেন যা নজরুল কোনভাবেই মেনে নিতে পারেন নি। ফলে বাসর রাতেই দৌলতপুর ছেড়ে চলে যান। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর নজরুল- নার্গিসের কোন যোগাযোগ হয় নি। ১৯৩৭ সালে নার্গিস নজরুলকে একটি চিঠি। লিখেন।
o ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল নজরুল কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকার মেয়ে আশালতা সেনগুপ্তা দুলী ওরফে প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন। প্রমীলাকে নিয়েই কেটেছিল নজরুলের দাম্পত্য জীবন।
কাজী নজরুল বাংলাদেশের রণসংগীতের রচয়িতা
o বাংলাদেশের রণসংগীত ‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল, নিম্নে উতলা ধরণি
o ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য নজরুল ঢাকায় আসেন। তখন সৈয়দ আবুল হোসেনের সরকারি বাসা বর্ধমান হাউজ (বর্তমান বাংলা একাডেমি) অবস্থানকালে এ গানটি রচনা করেন। গানটি প্রথমে ‘নতুনের গান’ শিরোনামে শিখা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে ‘সন্ধ্যা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
o ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের তৎকালীন মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে এ গানটিকে বাংলাদেশের রণসংগীত হিসেবে নির্বাচন করা হয়। বাংলাদেশের যে কোন সামরিক অনুষ্ঠানে এর ২১ লাইন যন্ত্রসংগীতে বাজানো হয়।
নজরুলের কারাবরণ
o তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ‘ধূমকেতু পত্রিকা‘র ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২২ সংখ্যায় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশের জন্য ২৩ নভেম্বর ১৯২২ তারিখে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৬ জানুয়ারি ১৯২৩ রাজদ্রোহের অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড হয়। আলিপুর জেলে দীর্ঘদিন আটক রাখার পর তাকে হুগলী জেলে পাঠানো হয়। হুগলী জেলের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন করেন। শেষ পর্যন্ত বিরজা সুন্দরীর অনুরোধে, তারই হাতে ৩৯ দিন পর ২৩ মে ১৯২৩ লেবুর রস পান করে অনশন ভঙ্গ করেন।
o ১৯৩০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ‘প্রলয় শিখা’ কাব্য নিষিদ্ধ করেই সরকার থেমে থাকে নি। এর মুদ্রণ ও প্রকাশনার অপরাধে নজরুলকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কবি রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন এবং গান্ধী-আরউন চুক্তির পর দণ্ড থেকে মুক্তি পান।
নজরুল ইসলামকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
০ ১৯২১ সালের আগস্ট মাসে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সাথে নজরুলের প্রথম দেখা হয়। পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় নজরুলকে পরিচয় করিয়ে দেন। (সূত্র: নজরুল তারিখ অভিধান, বাংলা একাডেমি)। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘রবীন্দ্রজীবনী‘ থেকে জানা যায় ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্র-নজরুলের প্রথম দেখা হয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ জরুলকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে যান। রবীন্দ্রনাথের একান্ত সচিব কবি সুধাকান্ত রায় চৌধুরী তাদের অভ্যর্থনা জানান।
o নজরুলের ‘ধূমকেতু‘ পত্রিকাকে আশীবাদ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেন- ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু, আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয়কেতন।
o ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বসন্ত‘ গীতিনাট্য নজরুলকে উৎসর্গ করেন। নজরুল তখন আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী। নজরুলের বন্ধু পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের মাধ্যমে এটি জেলে নজরুলের কাছে পাঠানো হয়। তখন জেলে বসেই নজরুল লিখেন কবিতা- ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে‘।
o হুগলি জেলে কর্মকর্তাদের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে নজরুল অনশন করলে রবীন্দ্রনাথ তাকে টেলিগ্রাম পাঠান- ‘Give up hunger strike. Our literature claims you.
নজরুল স্মৃতিবিজড়িত জায়গা
o কাজীর শিমলা, ত্রিশাল : কাজী রফিজ উল্লাহ দারোগা, ১৯১৪ মালে আসানসোলের রুটির দোকান থেকে কিশোর কবি নজরুলকে ত্রিশালে কাজীর শিমলায় নিজগ্রামে নিয়ে আসেন। কবি নজরুলকে ভর্তি করে দেন ত্রিশাল উপজেলা সদরের দরিরামপুর স্কুলে (বর্তমান নজরুল একাডেমি) সপ্তম শ্রেণিতে। কবি নজরুলের সেই বাল্য স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য এই গ্রামের বটতলা নামক স্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ।
o দৌলতপুর ১৯২১ সালে কাজী নজরুল বন্ধু আলী আকবর খানের আমন্ত্রণে তার বাড়ি কুমিল্লার দৌলতপুরে আসেন এবং ৭১ দিন অবস্থান করেন। আলী আকবর মানের বোনের মেয়ে সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিস এই বাড়িতেই থাকতেন। সেই সুবাদে কবির সাথে নার্গিসের সখ্য গড়ে উঠে।
০ কার্পাসডাঙা চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা উপজেলায় অবস্থিত কার্পাসডাঙ্গা। ১৯২৬ সালে বিপ্লবী হেমন্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কবি কলকাতার আমহা স্ট্রীট থেকে স্বপরিবারে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন এবং টানা দুই মাস অবস্থান করেন।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল
o বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কাজী নজরুল ঢাকায় আসেন এবং একই দিনে তাকে ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় (সাংবিধানিক স্বীকৃতি এখনো দেওয়া হয় নি)।
০ ১৯৭৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
o তিনি মোট ১৩ বার (১৯২৬, প্রথমবার) ঢাকায় আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন মোট ৫ বার।
চলচ্চিত্রে নজরুল
• ধূপছায়া (১৯৩১)
এব (১৯৩৪) : এতে কবি নায়ক নারায়ণ (নারদ) চরিত্রে অভিনয় করেন।
• পাতালপুরী (১৯৩৫)। এতে প্রথম নজরুল সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
• গৃহদাহ (১৯৩৬)
• গ্রহের ফের (১৯৩৭)
• বিদ্যাপতি। (১৯৩৭) এ চলচ্চিত্রটির কাহিনিকার।
• গোৱা (১৯৩৮)। এর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। বিশ্বভারতী আপত্তি করে এ ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত ঠিকভাবে গাওয়া হচ্ছে না। ফলে নজরুল সরাসরি রবীন্দ্রনাথের কাছে চলে যান। রবীন্দ্রনাথ তাকে সমর্থন করেন।
• সাপুড়ে (১৯৩৯)
• मন্দিনী (১৯৪১)
• দিকশুল (১৯৪১)
• অভিনয় (১৯৪১)
• চৌরঙ্গী (১৯৪২)
• শহর থেকে দূরে।
এসব চলচ্চিত্রের অধিকাংশে নজরুল গান রচনা, সুরারোপ ও সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কানাডায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। চলচ্চিত্রটির নাম ‘নজরুল, পরিচালকের নাম- ফিলিপ পারেন।
o জেনে রাখা ভাল
• সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কাজী নজরুল ইসলামকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘একুশে পদকে ভূষিত করেন। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মুহম্মদ সায়েম আনুষ্ঠানিকভাবে নজরুলকে ঐ পদক প্রদান করেন।
• ঔপন্যাসিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় কবির বন্ধু ও সহপাঠী।
কবি সত্যেন্দ্ৰনাথ দত্তের মৃত্যুর পর কাজী নজরুল ইসলাম তিনটি কবিতা ও গান রচনা করেন- ‘সত্যেন্দ্র প্রয়াণ‘, ‘সত্য-কবি‘ ও ‘সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ-গীতি‘।
গ্রন্থপরিচিতি
বাঁধন হারা এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস। উপন্যাসের নায়ক নুরুল হুদা। এর কাহিনি এরূপ- পিতামাতাহীন নুরুল হুদাকে রবিউল তার বাড়িতে নিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। রবিউলের স্ত্রী রাবেয়া তাকে স্নেহ করে এবং শ্যালক মনুর সঙ্গে গভী সখ্য।
একসময় রবিউলের ছোট বোন সোফিয়ার বান্ধবী প্রতিবেশী মাহবুবার সঙ্গে নুরুল হুদার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে ডাবী ও রবিউলের মধ্যস্ততায় বিয়ে ঠিক হয়। এসময় রহস্যজনক কারণে বাধন হারা নুরুল কাউকে কিছু না বলে বিয়ে ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনীর কাজে যোগদান করে দূরে চলে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় মাহবুবার বাবা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
পরে পিতৃহীনা অপরূপা সুন্দরী মাহবুবার বিয়ে হয় এক বৃদ্ধ জমিদারের সাথে। কিছুদিনের মধ্যে মাহবুবা বিধবা হয়। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে জামিদারি পায়। এ দিকে বাধন হারা নুরুর নীরব হাহাকার আর বেদনার মাঝে সেনাবাহিনীর জীবন শেষে প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে উপন্যাসটি শেষ হয়।
বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে পত্রালাপের মাধ্যমে পুরো উপন্যাসটি বর্ণিত। নুরুর প্রথমপত্র থেকেই সৈনিক জীবনের অসামান্য বর্ণনায় হিউমারের সন্ধান পাওয়া যায়।
মৃত্যুক্ষুধা কাজী নজরুল ইসলাম ‘মৃত্যুক্ষথা’ উপন্যাসটি বাস্তব অভিজ্ঞাতা থেকে লিখেছেন। ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সময়কালে তিনি মুর্খশিল্পের কেন্দ্রভূমি পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে ছিলেন।
এ কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়কের দরিদ্র হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের দারিদ্র ও দুঃখ ভরা জীবন নিয়ে উপন্যাসের কাহিনি গড়ে উঠেছে। উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র গানের মা চাঁদসড়কের বস্তি এলাকার বাস করে। তার তিন ছেলে মারা গেছে যৌবন বয়সে।
মৃত ছেলেদের বিধবা স্ত্রী (বড় বউ, মেঝো বউ, সেজো বউ) আর তাদের প্রায় এক ডজন ছেলে মেয়ে নিয়ে তার সংসার। আর ছোট ছেলে প্যাঁকালে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সবার ভরণ-পোষণের চেষ্টা করে।
এ উপন্যাসের দুটি অংশ। প্রথম অংশে দেখা যায়- এসব অভাব-অনটনের মধ্যে খ্রীষ্টান কুর্দি ও প্যাঁকালে একে অপরকে প্রচণ্ড ভালবাসে। ভালবাসার জন্য প্যাঁকালে ধর্মান্তরিত হয়।
আর দ্বিতীয় অংশে আছে আনসার-কবির প্রসঙ্গ। এ দুই অংশের যোগসূত্র মেজো বউ। শেষ দিকে দেখা যায়। অভাবের তাড়নায় যেন বউ মান হয় এবং বরিশালে নিজের জীবন কাটিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সন্তানদের টানে তাকে বস্তিতে ফিরে আসতে হয়।
আর প্যাঁকালেকে খাঁন বাহাদুর সাহেব ঝুড়ি টাকা বেতনের চাকুরী দিলে সে কুশিকে নিয়ে মুসলমান হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এভাবেই উপন্যাসের কাহিনি শেষ হয়।
কুহেলিকা :
কাজী নজরুল ইসলামের সর্বশেষ উপন্যাস ‘কুহেলিকা’ প্রথমে ‘নওরোজ পত্রিকা’র পাঁচটি সংখ্যার ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। তবে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে বাকী অংশ সাপ্তাহিক ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বুহেলিকা উপন্যাসের মূল চরিত্র জাহাঙ্গীর।
অগ্নিবীণা :
কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’। এটি ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক (অক্টোবর, ১৯২২) প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে মোট ১২টি কবিতা আছে- প্রলয়োল্লাস, বিদ্রোহী, রক্তাম্বরধারিণী মা, আগমণী, ধূমকেতু, কামাল পাশা, আনোয়ার পাশা, রণভেরী, শাত-ইল-আরব, খেয়াপারের তরণী, কোরবাণী ও মোহররম।
কাব্যগ্রন্থটি বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করা হয়। এ প্রচ্ছদ পরিকল্পনা করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং প্রচ্ছন এঁকেছিলেন বীরেশ্বর সেন। অগ্নিবীণা কাবো নজরুল ইতিহাস আশ্রিত ঐতিহ্য ব্যবহার করেছেন।
মুসলিম ঐতিহ্য থেকে ইমাম হাসান-হোসেন, ভারতীয় পুরাণ-ঐতিহ্য থেকে পররামের কঠোর কুঠার ব্যবহার করেছেন সমগ্র অন্যায়-অনাচার বিনাশ করে পৃথিবীতে শান্তি আনানের জন্য।
তুর্কী বীর কামাল পাশা যেমন নিজের দেশের গৌরব, দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে আত্মপ্রতায়ী, তেমনি কামাল বাংলায় তিনি সৃষ্টি করতে চেয়েছেন।
‘বিদ্রোহী‘ কবিতায় কবির বিদ্রোহের মূল সুর তীব্রভাবে বেজে উঠেছে। ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্থ এ চরণটিতে বিদ্রোহ ও প্রেম একসাথে বেজে উঠেছে। এ চরণটি যেন সময় নজরুল সাহিত্যের অনুবিশ্ব।