বেগম রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২) | রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (Begum Rokeya, 1880–1932)
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের ৬ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামের জমিদার সারের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নাম রোকেয়া খাতুন। তিনি সাহিত্যিক ও সমাজসেবী। পিতা জহিরউদ্দীন মোহাম্মদ আৰু আলী হায়দার সাবের সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। মাতা রাহাতুন্নেসা চৌধুরী।
o এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বড় ভাই ইব্রাহিম সাবের ও বোন করিমুন্নেসার কাছে সামান্য বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেন।
o মুসলিম নারী মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ।
০ ১৮৯৮ সালে উর্দুভাষী বিপত্নীক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। ফলে রোকেয়া বেগম থেকে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন হন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর উৎসাহে ভাগলপুরে বাসকালে সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯০৯ সালের ৩ মে সাখাওয়াত হোসেন মারা যান।
o স্বামীর মৃত্যুর পাঁচ মাস পর ১৯০৯ সালে ১ অক্টোবর পাঁচ জন ছাত্রী নিয়ে ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১০ সালে পারিপার্শ্বিক কিছু সমস্যার কারণে স্কুল বন্ধ করে কলকাতায় চলে যান। ১৯১১ সালে আট জন ছাত্রী নিয়ে স্কুলটি কলকাতায় পুনরায় চালু করেন।
০ ১৯১৬ সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কলকাতার “আমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ (মুসলিম মহিলা সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন।
o ১৯২৭ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এ সম্মেলনে বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন যা সে যুগের পরিপ্রেক্ষিতে ছিল দুঃসাহসিক কাজ। কারণ সে যুগে অভিজাত শ্রেণির মুসলমানদের ভাষা ছিল উর্দু।
o ডিসেম্বর ১৯৩২ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় তিনি ‘নারীর “অধিকার” নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন। ৬ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়।
সাহিত্যকর্ম
১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামক গল্পের মাধ্যমে সাহিত্য জগতে পদার্পন। গল্পটি নবনূর পত্রিকা মতান্তরে নবপ্রভা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
• মতিচুর (প্রবন্ধ, ১ ১৯০৪, ২য় ১৯ 22 ) । মতিচুর হয় আছে- সৌরজগৎ, ডেলিসিয়া হত্যা, জ্ঞান-ফল, না, न নলী, মুক্তিফল প্রভৃতি গল্প ও রূপকথা।
• Sultana’s Dream (নকশাধর্মী রচনা ১৯০৮)। এ গ্রন্থটি তিনি নিজেই বাংলায় অনুবাদ করেন সুলতানার স্বপ্ন” নামে। এটি একটি প্রতীকী রচনা।
অবরোধবাসিনী (নকশাধর্মী গদ্যগ্রন্থ, ১৯৩১)। এতে নারীদের অবরোধের বিভিন্ন কাহিনী নকশা আকারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে ৪৭টি নকশাধর্মী কাহিনী রে
o উপন্যাস পদ্মরাগ (১৯২৪)
o নবনূর, মোহাম্মদী পত্রিকায় বহু গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও রসরচনা প্রকাশিত হয়। এসকল পত্রিকা সামগ্রিক পরে মিসেস আর, এস হোসেন নামে লেখা প্রকাশিত
o ‘সওগাত’ পত্রিকার সাথে তার নিবিড় সম্পৃক্ততা ছিল। এ পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় রোকেয়ার ‘সওগাত’ কবিতাটি ছাপা হয়। সওগাতের সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন তাঁকে স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য উৎসাহিত করেন।
গ্রন্থপরিচিতি
সুলতানার স্বপ্ন –
বেগম রোকেয়ার একটি নকশাধর্মী রচনা ‘সুলতানাস ড্রিম বা সুলতানার স্বপ্ন‘। সে এক কল্পলোকের কাহিনি। কাহিনিটি যিনি বলেছেন তার নাম সুলতানা।
এ গ্রন্থে বেগম রোকেয়া একটি নারীর স্বপ্ন রাজ্য বা ইউটোপিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে দেশ শাসন থেকে শুরু করে যুদ্ধ সবকিছু করে নারীরা। আর পুরুষেরা করে ঘরের কাজ ।
এ গ্রন্থের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, এখানে লেখিকা রান্নাবান্না থেকে শুরু করে যুদ্ধ করার কাজেও সৌরশক্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন। পাশাপশি বিমান পথে যাতায়াত, বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ এবং সৌরচুল্লিতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে রান্নাবান্নার কথা বলেছেন।
যা রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্নকে বৈজ্ঞানিক ইউটোপিয়ায় পরিণত করেছে। রোকেয়ার বৈজ্ঞানিক ও বৈপ্লবিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশে বর্ণিত এ নারীস্থানে কোন আদিম স্বর্ণযুগ সৃষ্টি করেন নি। সৃষ্টি করেছেন ভবিষ্যতের বিজ্ঞান নির্ভর সমাজ।
পদ্মরাগ :
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচিত উপন্যাস ‘পদ্মরাগ’ (১৯২৪)। তবে সাহিত্য সমালোচকগণ একে উপন্যাস না বলে উপন্যাসোপম গদ্য আখ্যায়িকা বলে অভিহিত করেছেন। ২৮ পরিচ্ছেদে বিভক্ত এ গ্রন্থের শুরুটি অত্যন্ত নাটকীয় কিন্তু সাবলীল ও প্রাঞ্জল।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সিদ্দিকা, যার প্রণয়প্রার্থী লতিফ। এছাড়া উল্লেখযোগ্য চরিত্র তারিনী, রফিকা, সৌদামিনী, সকিনা, হেলেন, ঊষা প্রমুখ। এ উপন্যাসে ঘটনার আবর্তে আমাদের সামনে ফুটে উঠেছে একই সঙ্গে নারী চরিeের কঠিন ও কোমল, প্রেমময়ী ও নিষ্ঠুর, উদ্যমী ও পশ্চাদপদ প্রভৃতি নানা দিক।
দীন তারিণীর আশ্রম তারিণী ভবন সংলগ্ন বিদ্যালয় ও ক্লেশ নিবারণী সমিতির বিবরণ থেকে জানা যায় নারী উদ্যোগ ও পরিশ্রমী হয়ে কিভাবে নিজের পশ্চাদপদতাকে অতিক্রম করতে পারে। অতিক্রম করতে পারে সমাজের ভিত্তিহীন বিধানগুলোকে।