Bangla Sahityer Itihas

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (Bangla Sahityer Itihas)

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (Bangla Sahityer Itihas), বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস – অনলাইনে বাংলা সাহিত্যের খুঁটিনাটি, প্রশ্নোত্তরে প্রাচীন ও মধ্যযুগ।

চর্যাপদঃ

বাংলাভাষার আদি সাহিত্য চর্যাপদ যা হাজার বছর আগে রচিত হয়েছে এবং হাজার বছর পর আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যর একমাত্র আদি নিদর্শন চর্যাপদ, চর্যাপদ হচ্ছে কবিতা / গানের সংকলন, চর্যাপদ হচ্ছে বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মের সাধনতত্ব, চর্যাপদ হচ্ছে পাল ও সেন আমলে রচিত।

চর্যাপদ রচনার প্রেক্ষাপটঃ

১৮৮২ সালে রাজা রাজেন্দ্র্লালমিত্র কিছু পুঁথি সাহিত্যের পরিচয় দিয়ে The Sanskrit Buddhist Literature in Nepal
এই গ্রন্থটি পাঠ করে সবচেয়ে বেশী উৎসাহিত হন যার উপাধি মহামহোপধ্যায়। যিনি পরবর্তী কালে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

তিনি ১৯০৭ সালে ৩য় বারের মত নেপাল গমন করেন। নেপালের রয়েল লাইব্রেরী থেকে একসঙ্গে ৪ টি গ্রন্থ আবিষ্কার করেন।

এর একটি হচ্ছে চর্যাপদ, বাকী ৩ টি হচ্ছে অপভ্রংশ ভাষায় রচিত
১. সরহপদের দোহা
২. কৃষ্ণপদের দোহা
৩. ডাকার্ণব

উল্লেখিত ৪ টি গ্রন্থ একসঙ্গে কলিকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯১৬ সালে তখন চারটি গ্রন্থের একসংগের নাম দেওয়া হয় হাজার বছরের পুরোনো বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধ গান ও দোহা।

এটি প্রকাশিত হবার পর পালি সংস্কৃত সহ বিভিন্ন ভাষাবিদ রা চর্যাপদকে নিজ নিজ ভাষার আদি নিদর্শন বলে দাবী করেন।

এসব দাবী মিথ্যা প্রমাণ করেন ড. সুনীতি কুমার চট্রোপাধ্যায়। ১৯২৬ সালে The Origin and Development of Bengali Language গ্রন্থে চর্যাপদ এর ভাষা বিষয়ক গবেষণা করেন এবং প্রমাণ করেন চর্যাপদ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন।

১৯২৭ সালে শ্রেষ্ঠ ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদের ধর্মতত্ব বিষয়ক গবেষণা করেন এবং প্রমাণ করেন যে চর্যাপদ বাংলাসাহিত্যের আদি নিদর্শন।

চর্যাপদের নামকরণঃ

১. আশ্চর্যচর্যচয় ২. চর্যাচর্যাবিনিশ্চয় ৩. চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয় ৪. চর্যাগীতিকোষ ৫. চর্যাগীতি

চর্যাপদ মানে আচরণ / সাধনা

চর্যাপদের পদসংখ্যাঃ

মোট ৫১ টি পদ ছিল। ৪৬টি পূর্ণ পদ আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কারের সময় উপরের পৃষ্ঠা ছেঁড়া থাকার কারোনে সবগুলো পদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এবং পরে একটি পদের অংশবিশেষ সহ মোট সাড়ে ছেচল্লিশটি পদ আবিষ্কৃত হয়।

চর্যাপদে কবির সংখ্যাঃ

চর্যাপদে মোট ২৪জন কবি পাওয়া যায়
১ জন কবির পদ পাওয়া যায়নি তার নাম – তন্ত্রীপা / তেনতরীপা
সেই হিসেবে পদ প্রাপ্ত কবির মোট সংখ্যা ২৩ জন

উল্লেখযোগ্য কবি

১. লুইপা ২. কাহ্নপা ৩. ভুসুকপা ৪. সরহপা ৫. শবরীপা ৬. লাড়ীডোম্বীপা ৭. বিরূপা
৮. কুম্বলাম্বরপা ৯. ঢেন্ডনপা ১০. কুক্কুরীপা ১১. কঙ্ককপা

কবিদের নাম শেষে পা দেওয়ার কারণঃ
পদ > পাদ > পা
পাদ > পদ > পা
পদ রচনা করেন যিনি তাদেরকে পদকর্তা বলা হত যার অর্থ সিদ্ধাচার্য / সাধক [এরা বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মের সাধক ছিলেন]

২ টি কারণে নাম শেষে পা দেওয়া হতঃ
১. পদ রচনা করতেন
২. সম্মান / গৌরবসূচক কারনে

লুইপাঃ
১. চর্যাপদের আদিকবি
২. রচিত পদের সংখ্যা ২ টি

কাহ্নপাঃ
১. কাহ্নপার রচিত মোট পদের সংখ্যা ১৩ টি –তিনি সবচেয়ে বেশী পদ রচয়ীতা
২. উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ১২ টি
৩. তার রচিত ২৪ নং পদটি পাওয়া যায়নি

ভুসুকপাঃ
১. পদসংখ্যার রচনার দিক দিয়ে ২য়
২. রচিত পদের সংখ্যা ৮টি
৩. তিনি নিজেকে বাঙ্গালী কবি বলে দাবী করেছেন
৪. তার বিখ্যাত কাব্যঃ অপনা মাংসে হরিণা বৈরী অর্থ – হরিণ নিজেই নিজের শত্রু

সরহপাঃ
১. রচিত পদের সংখ্যা ৪ টি

শবরীপাঃ
১. রচিত পদের সংখ্যা ২ টি
২. গবেষকগণ তাকে বাঙ্গালী কবি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন
৩. বাংলার অঞ্চলে ভাগীরথী নদীর তীরে বসবাস করতেন বলে ধারণা করা হয়। যদি তিনি ভাগীরথী নদীর তীরে বসবাস না করতেন তাহলে বাঙ্গালী কবি হবেন না।

কুক্কুরীপাঃ
১. রচিত পদের সংখ্যা ২ টি
২. তার রচনায় মেয়েলী ভাব থাকার কারণে গবেষকগণ তাকে মহিলা কবি হিসেবে সনাক্ত করেন।

তন্ত্রীপাঃ
১. উনার রচিত পদটি পাওয়া যায় নি।
২. উনার রচিত পদটি ২৫ নং পদ।

ঢেন্ডনপাঃ
চর্যাপদে আছে যে বেদে দলের কথা, ঘাঁটের কথা, মাদল বাজিয়ে বিয়ে করতে যাবার উৎসব, নব বধুর নাকের নথ ও কানের দুল চোরের চুরি করার কথা সর্বোপরি ভাতের অভাবের কথা
ঢেন্ডনপা রচিত পদে তৎকালীন সমাজপদ রচিত হয়েছে। তিনি পেশায় তাঁতি
টালত মোর ঘর নাই পড়বেশী
হাঁড়িতে ভাত নাই নিতি আবেশী

[আবেশী কথাটার ২টি অর্থ রয়েছে
ক্ল্যাসিক অর্থে – উপোস এবং রোমান্টিক অর্থে – বন্ধু]

চর্যাপদের ভাষাঃ

চর্যাপদ প্রাচীন বাংলা ভাষায় রচিত- এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। কতিপয় গবেষক চর্যাপদের ভাষা প্রাচীন বাঙ্গালা মেনে নিয়েই এ ভাষাকে সান্ধ্য ভাষা / সন্ধ্যা ভাষা / আলো আঁধারের ভাষা বলেছেন।
অধিকাংশ ছন্দাসিক একমত – চর্যাপদ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।

বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগ

অন্ধকার যুগ

মধ্যযুগের (১২০১-১৩৫০ খ্রি.) পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের মোট ১৫০ বছরকে বলা হয় “The Dark Age’ বা অন্ধকার যুগ বা আঁধার যুগ। অন্ধকার যুগ এমন একটি যুগ যে যুগে বাংলা সাহিত্যের কোন নিদর্শন পাওয়া যায় ।

বাংলা সাহিত্যে অন্ধকার যুগ শুরু হয়েছে ১২০৪ (১২০১ ) সালে বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমণের সময় থেকে।

অন্ধকার যুগের জন্য দায়ি করা হয় তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার বাজিকে। তিনি ১২০৪ সালে (মতান্তরে ১২০১ ) হিন্দু সর্বশেষ রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে বাংলা জয় করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। আর খলজির এই তুর্কি আক্রমণের ফলে এ দেশে হত্যা এবং ধ্বংসের যে যজ্ঞ চলে তাতে অনেক মন্দির মঠ ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যের নিদর্শন পুঁথিসমূহ ধ্বংস হয়। যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন সেখানে সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্মেষ বা বিকাশ কিছুট চলতে পারে না। যার কারণে এ সময় তেমন কোন উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচিত হয়নি।

অন্ধকার যুগকে সন্ধিযুগ ও বলা হয়।

মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে অন্ধকার নেমে আসার কারণ – রাজনৈতিক পট পরিবর্তন।

অন্ধকার যুগের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ

এতে প্রচুর সংস্কৃত থাকায় ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় এ গ্রন্থকে “Dog Sankrit বলেছেন।

শূন্যপুরাণ

জ’ রামাই পণ্ডিত রচিত ধর্মপূজার শাস্ত্রগ্রন্থ – শূন্যপুরাণ ।

এতে ৫১টি অধ্যায় আছে। যার প্রথম এটিতে সৃষ্টিতত্ত্বের কথা বর্ণিত রয়েছে। ও এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত ধর্ম পূজার গ্রন্থ।

শূন্যপুরাণ

এতে বৌদ্ধদের শূন্যপদ এবং হিন্দুদের লৌকিক ধর্মের মিশ্রণ ঘটেছে।

শূন্যপুরাণ গদ্য ও পদ্যের মিশ্রণে রচিত একটি চম্পূকাব্য। তেল হিন্দু ধর্মের সঙ্গে মিলন সাধনের জন্য রামাই

পণ্ডিত ধর্মপূজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

নিরঞ্জনের রুম্পা বা নিরঞ্জনের উম্মা

নিরঞ্জনের রুনা হলো শূন্যপুরাণ’ কাব্যের অন্তর্গত একটি অংশ বিশেষ

বা কবিতা ।

এ কবিতায় বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সধর্মীদের ওপর বৈদিক ব্রাহ্মণদের। অত্যাচারের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।

অ এছাড়াও এ কবিতায় মুসলমানদের জাজপুর প্রবেশ এবং ব্রাহ্মণ্য দেবদেবীর রাতারাতি ধর্মান্তরের কাল্পনিক চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।

সেক শুভোদয়া

বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগে রচিত সংস্কৃত ভাষার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সেক শুভোদয়া

তো সেক শুভোদয়া অশুদ্ধ বাংলা ও সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণে রচিত একটি আছ। তো রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি হলায়ুধ মিশ্র রচিত সেক শুভোদয়া সংস্কৃত গদ্যপদ্যে লেখা চম্পুকাব্য ।

গ্রন্থটিতে মোট ২৫টি অধ্যায় আছে।

চিত্র: রাজা লক্ষণ সেন ও সভাকবি হলায়ুধ মিশ্র এবং সেফগুভোদয়ার একটি অ বাংলায় সেন বংশের শেষ শাসক রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি হলায়ুধ মিশ্র রচিত এ কাব্য সম্পর্কে ড. মুহম্মদ এনামুল হক বলেছেন ‘সেক শুভোদয়া’ খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর একেবারেই গোড়ার দিককার রচনা। রাজা লক্ষ্মণসেন ও শেখ জালালুদ্দীন তাবরেজির অলৌকিক কাহিনী নিয়ে এটি রচিত। শেষের অর্থাৎ শোখের গৌরব ব্যাখ্যাই এই পুস্তিকার উদ্দেশ্য। গ্রন্থটিতে প্রাচীন বাংলার | মাহাত্মজ্ঞাপক ৬টি বাংলা ছড়া বা আর্যা, খনার বচন এবং ভাটিয়ালী রাগের একটি প্রেম সঙ্গীত স্থান পেয়েছে। পণ্ডিত ও ইতিহাসকারদের মতে, এগুলোই হচ্ছে বাংলা [ ভাষায় প্রাপ্ত পীর মাহাত্মজ্ঞাপক কাব্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

জে ‘চম্পুকাবা’ হলো- গদ্যপদ্য মিশ্রিত কাব্য। ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ হলো – একটি গীতিকবিতার সংকলন ( এর ভাষা

“জ রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন- হলায়ুধ মিশ্র ও জয়দেব।

অন্ধকার যুগের বিপক্ষ পণ্ডিত- ১. ড. এনামুল হক

২. ড. আহমদ শরীফ

৩. ড. ওয়াকিল আহামেদ

শ্রীকৃষ্ণকীৰ্ত্তন

ঐ একক কবির চন হিসেবে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য বাংলা সাহিত্যের প্রথম কাব্য; কারণ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাবা এককভাবে রচনা করেছেন বড় চণ্ডীদাস।

মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন / প্রথম কাব্য – শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তন ।

আবিষ্কারক:

গ্রন্থ হিসেবে বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন; কারণ চর্যাপদ প্রথম শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য দ্বিতীয় ।

চার ৫০ বছর পর ১৯০৯ সালে রায় বিষণ্ণত

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রামের এক গৃহস্থ দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির গোয়াল ঘরের টিনের চালার নিচ থেকে পুঁথি আকারে অরে রক্ষিত এ কাব্য আবিষ্কার করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন অধ্যায়ের সगान টা

সর্বজন স্বীকৃত ও খাঁটি বাংলা ভাষায়

রচিত প্রথম কাব্য গ্রন্থ। এক শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের প্রকৃত নাম ছিল: শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ।

১৯১৬ সালে রায়ের সম্পাদনার এ কাব্যটি কলকাতার বঙ্গীয়

সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়। বসন্তরঞ্জন রায়ের উপাধি – বিষণ্ণত। নবদ্বীপের ভুবনমোহন তাঁকে এ উপাধি প্রদান করেন।

১৫০১-১৬০০ খ্রি.চৈতন্য পরবর্তী যুগ ১৬০১-১৮০০ খ্রি.ড. সুনীতিকুমার ও গোপাল হালদারের মতে, চৈতন্য যুগ ১৫০০-১৭০০ ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে চৈতন্যযুগ – ষোড়শ শতাব্দী।জীব গোস্বামীএদের মধ্যে সনাতন গোস্বামী, রূপ গোস্বামী, জীব গোস্বামী ৈ শাস্ত্র রচনা করেন এবং রঘুনাথ ভট্ট, রঘুনাথ দাস, গোপাল ভ বৃন্দাবনে বৈষ্ণব সমাজের প্রতিষ্ঠা করে সারা বাংলাদেশে বৈষ্ণবন্যা প্রচারের ব্যবস্থা করেন।বৈষ্ণব সাহিত্য তিন ভাগে বিভক্ত –১. বৈষ্ণব পদাবলি২. জীবনী সাহিত্য৩. বৈষ্ণব শাস্ত্র| বৈষ্ণব পদাবলিবৈষ্ণব সাহিত্যবৈষ্ণব শাস্ত্ৰজীবনী সাহিত্য

শ্রীচৈতন্যদেবজে শ্রী চৈতন্যদেবের জন্ম ১৪৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি (২৩) ফাল্গুন) শনিবার আনুমানিক বেলা ১০টার দিকে ভারতের নবদ্বীপে।চৈতন্য পরবর্তী যুগকে সুবর্ণযুগ বলা হয়। চৈতন্যদেবের নী নিয়ে“শ্ৰীচৈতন্যভাগবত” লেখেন বৃন্দাবন দাস এবং ধ “চৈতন্য চরিতামৃত” নামক বিখ্যাত বইটি রচনা করেন কৃষ্ণানায়। কবিরাজ, আর চৈতন্য মঙ্গল’ লেখেন লোচন দাস। GP তিনি পরলোকগমন করেন ১৫৩৩ সালে ভারতের পুরীতে।“বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামী”‘বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামী’ নামে পরিচিত চৈতন্যদেবের হয় শিষ্য। বৃন্দাবনে অবস্থান করে, বৈষ্ণবধর্ম প্রচারে ভূমিকা রাখেন –সনাতন গোস্বামীর রঘুনাথ ভট্টরূপ গোস্বামী রঘুনাথ দাসজীব-দোস্বামী গোপাল ভষড় গোস্বামীডে তাঁর বাবা জগন্নাথ মিশ্র সিলেট জেলার ঢাকা দক্ষিণ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।তাঁর প্রথম স্ত্রী লক্ষীদেবী ( সর্প দংশনে মারা যান), দ্বিতীয় স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া। – তাঁর পিতৃপ্রদত্ত বা প্রকৃত নাম – বিশ্বম্ভর বাল্য নাম নিমাই, অন্যনাম – গৌরাঙ্গ। wসন্ন্যাস গ্রহণের পর নাম হয় চৈতন্য।চৈতন্যদেব ছিলেন- বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারক।চৈতন্যদেবের ধর্ম প্রচারের মূল বাণীটি ছিল জীবে দয়া ঈশ্বরে ভক্তি সকলের অধিকার’।ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ – চৈতন্যদেবকে মুসলিম যুগে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ এবং বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ বলেছেন।চলো মাত্র ৪৮ বছর জীবিত থেকে শেষ ১২ বছর তাঁর বাহ্যিক চেতনাই ছিল না। জা চৈতন্যদেব বিশেষ ধর্মসম্প্রদায়, সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর যে প্রভাব বিস্তার করে গেছেন, ইতিহাসে তাঁর সমকক্ষ কোন তুলনা খুঁজেপাওয়া যায় না জা শ্রীচৈতন্যদেব নিজে কোন পদ রচনা না করেও বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগে তাঁর নামে একটি যুগের সৃষ্টি হয়েছে।মধ্যযুগ ১২০১-১৮০০ द.প্রাকচৈতন্য যুগ ১২০১-১৫০০ খ্রি.চৈতন্য যুগ১৫০১-১৬০০ খ্রি.চৈতন্য পরবর্তী যুগ ১৬০১-১৮০০ খ্রি.ড. সুনীতিকুমার ও গোপাল হালদারের মতে, চৈতন্য যুগ ১৫০০-১৭০০ ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে চৈতন্যযুগ – ষোড়শ শতাব্দী।জীব গোস্বামীএদের মধ্যে সনাতন গোস্বামী, রূপ গোস্বামী, জীব গোস্বামী ৈ শাস্ত্র রচনা করেন এবং রঘুনাথ ভট্ট, রঘুনাথ দাস, গোপাল ভ বৃন্দাবনে বৈষ্ণব সমাজের প্রতিষ্ঠা করে সারা বাংলাদেশে বৈষ্ণবন্যা প্রচারের ব্যবস্থা করেন।বৈষ্ণব সাহিত্য তিন ভাগে বিভক্ত –১. বৈষ্ণব পদাবলি২. জীবনী সাহিত্য৩. বৈষ্ণব শাস্ত্র| বৈষ্ণব পদাবলিবৈষ্ণব সাহিত্যবৈষ্ণব শাস্ত্ৰজীবনী সাহিত্য

বৈষ্ণবপদাবলি বা পদাবলি সাহিত্য

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ‘বৈষ্ণব পদাবলি’ ।

শ্রীচৈতন্যদেব ও তাঁর প্রচারিত ধর্মকে নিয়ে যে সাহিত্য রচিত হয় তাকে বৈষ্ণবপদাবলি বা পদাবলি সাহিত্য বলে।

বৈষ্ণবপদাবলির উল্লেখযোগ্য কবিসমূহ:

কে পদ বা পদাবলি হল – বৌদ্ধ বা বৈষ্ণবীয় ধর্মের গুঢ় বিশ্বাসের বিশেষ সৃষ্টি।

৮ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ রচনা হলো বৈষ্ণব পদাবলি।

এ পদাবলি সাহিত্য হলো- বৈষ্ণব তত্ত্বের রসভাষ্য। বৈষ্ণব মতে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক বিদ্যমান। এই প্রেম সম্পর্ককে বৈষ্ণব মতালম্বীগণ রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা রূপকের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছেন।

এ বৈষ্ণব গীতিতে পাঁচটি রসের উল্লেখ পাওয়া যায়। যথা শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য এবং মধুর।

বৈষ্ণবদের উপাস্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর আনন্দময় প্রেমময় প্রকাশ ঘটেছে রাধার মাধ্যমে।

রাধা কৃষ্ণের প্রেম লীলা তো বৈষ্ণব পদাবলি’ রাধা ও কৃষ্ণের আকর্ষণ-বিকর্ষণের বিচিত্র অনুভূতি সম্বলিত এক প্রকার গান।

তাই রাধাকৃষ্ণ প্রেম-লীলার মাধুর্য পদাবলির গানের উপজীব্য হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণের ও তার প্রেয়সীভাবাপন্ন ভক্তদের যে মধুর সম্বন্ধ এবং এই প্রিয় সন্ধজনিত পরস্পরের মধ্যে যে সম্ভোগ ভাব তার নাম মধুর রস।

বৈষ্ণব সমাজে বৈষ্ণব পদাবলি মহাজন পদাবলি’ এবং বৈষ্ণব পদকর্তাগণ ‘মহাজন’ নামে পরিচিত ছিল।

পদাবলির আদি কবি বিদ্যাপতি। তিনি ব্রজবুলি ভাষায় পদগুলো রচনা করেন।

জি বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির আদি রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস। বৈষ্ণব পদাবলি রচনায় জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, লোচনদাস, বলরামদাসের নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আধুনিকযুগের কবিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ডো বৈষ্ণব পদাবলীতে মূলত যার সম্পর্ক দেখানো হয় – এষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক।

তে বৈষ্ণব পদাবলীর যে কবি অলংকার শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন – গোবিন্দ দাস।

এ বৈষ্ণবপদাবলি প্রথম সংকলন করেন – আউল মনোহর দাস।

কবি সংস্কৃত সাহিত্যের একজন মধ্যযুগীয় অন্যতম প্রসিদ্ধ কবি।

বৈষ্ণব পদাবলির আদি কবি, তিনি লক্ষণ সেনের সভাকবি ছিলেন।

জয়দের বাঙালি কবি ছিলেন কিন্তু পদ রচনা করেছিলেন সংস্কৃত ভাষায় ।

কবি জয়দেব

না তার বিখ্যাত কাব্য গীতিগোবিন্দ; এটি সংস্কৃত গীতিকাব্য। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা এর মুখ্য বিষয়।

এতে ১২ টি সর্গ আছে। চরিত্র- সখী, রাধা কৃষ্ণ (৩টি)।

এ সংগীত-শ্লোক অর্থে পদাবলি কথাটি তিনি প্রথম ব্যবহার করেন। জয়দেব ছিলেন লক্ষ্মণসেনের ( ১১৭৮ – ১২০৬) রাজসভার পঞ্চরত্নের

অন্যতম; অপর চারজন হলেন গোবর্ধন আচার্য, শরণ, ধোয়ী ও উমাপতিধর। Car Note: বৈষ্ণব পদাবলির আদি কবি প্রিলি পরীক্ষার ক্ষেত্রে অপশনে জয়দেব না থাকলে বিদ্যাপতি উত্তর হবে।

বিদ্যাপতি

এ বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের মৈথিলি কৰি ।

জে বিদ্যাপতিকে – মিথিলার কবি বা মৈথিল কোকিল বলা হয়। কারণ তিনি মিথিলার রাজা শিবসিংহের সভাকবি ছিলেন।

তিনি বাঙালি কবি নন। তিনি ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেছেন। জা উপাধি – মৈথিল কোকিল, কবিকণ্ঠহার।

বাঙালি না হয়েও তিনি বাংলা সাহিত্যে

স্বাতন্ত্র্য স্থানের অধিকারী। জ একটি বাংলা পক্তি না লিখেও বাংলা সাহিত্যে তাকে অত্যন্ত মর্যাদাবান কবি বলা হয়।

বিদ্যাপতি মৈথিলি, অবহটঠ, সংস্কৃত ও ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেন। G বিদ্যাপতির কাব্যকে রবীন্দ্রনাথ রাজকন্ঠের মণিমালা’ বলেছেন।

বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন বিদ্যাপতির কবিতা স্বর্ণহার, বিদ্যাপতির গান মুরজবীণাসঙ্গিনী ব্রীকণ্ঠগীত”। এ বিদ্যাপতিকে কোন কোন কৰি দেহবাদি কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

বিদ্যাপতির গ্রন্থঃ

১. কীর্তিলতা- অপভ্রংশ অবহটঠ ভাষায় লেখা ঐতিহাসিক কাব্য। ২. কীর্তিপতাকা ইতিহাস গ্রন্থ (অবহটঠ ভাষায়)।

৩. পুরুষ পরীক্ষা মণীষা ও শিল্পকৃতির সমন্বয়রূপ কথা সাহিত্য (সংস্কৃত

(ভাষায়)।

৪. গোরক্ষ বিজয় (সংস্কৃত নাটক)। ৫. বিভাগসার পাণ্ডিত্য বিচার সম্বলিত স্মৃতিগ্রন্থ।

দানবাক্যবলী। ৭. লিখনাবলী – অলঙ্কার শাস্ত্র বিষয়ক।

বিদ্যাপতির অমর উক্তি

১. এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর এ ভরা বাদর মাহ ভাদর

শূন্য মন্দির মোর। এতদিন হুলপিয়া তোহ হম যেহে হিয়া শীতল শীল কলাপে।

নব বৃন্দাবন নব নব তরুগণ

নব নব বিকশিত ফুল। 8. কি কহব রে সখি আনন্দ তর

চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর। ৫. আজু রজনী হম ভাগে গমাওল

পেছল পিয়া মুখ চন্দা। নব অনুরাগিনী রাধা কচু নাহি মান এ বাধা ।

ব্রজবুলি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় কাব্যভাষা বা উপভাষা । ব্রজবুলি বলতে সাধারণ ভাবে বোঝায় ব্রজের বুলি অর্থাৎ ব্রজ অঞ্চলের ভাষা। পদগুলিতে রাধাকৃষ্ণের ব্রজলীলা বর্ণিত হওয়ায় এর নাম হয়েছে ব্রজবুলি অর্থাৎ ব্রজ অঞ্চলের ভাষা।

অ ব্রজবুলি মূলত এক প্রকার কৃত্রিম মিশ্রভাষা। অর্থাৎ মৈথিলি ও বাংলার মিশ্রিত রূপ হলো ব্রজবুলি ভাষা। ও মিথিলার কবি বিদ্যাপতি এর উদ্ভাবক।

উল্লেখ্য, প্রাচীন ভারতবর্ষের ব্রজভূমি (অধুনা উত্তর প্রদেশ) অঞ্চলে ব্রজভাষা নামের একটি ভাষা রয়েছে। ধারণা করা হয় বৃন্দাবনের রাধাকৃষ্ণ সম্ভবত সে ভাষায়ই কথা বলতেন ।

ক্রমৈথিলী ভাষার ক্রমরূপান্তর হিসেবে ব্রজবুলি ভাষার বিকাশ। ব্রজবুলি কখনও মুখের ভাষা ছিল না। এটি ছিল কবিদের কাব্য রেখার ভাষা। এই জন্য এ ভাষাকে কৰি ভাষাও বলা হয়।

ব্রজবুলি একটি কৃত্রিম ভাষা । পদাবলীর প্রথম কবি চণ্ডীদাস।

বৈষ্ণব পদাবলীর অবাঙালি কবি বিদ্যাপতি।

বৈষ্ণব পদাবলি যে ভাষায় রচিত – ব্রজবুলি ভাষায় ।

তো ব্রজবুলি ভাষার উদ্ভাবক মিথিলার কবি বিদ্যাপতি।

ব্রজবুলির শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি গোবিন্দদাস কবি রাজ। তে বিদ্যাপতি যে ভাষায় পদ রচনা করেন ব্রজবুলি ভাষায়।

মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় কাব্যভাষা বা উপভাষা – ব্রজবুলি।

তো বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির আদি কবি এবং পদাবলির শ্রেষ্ঠ কবি। চণ্ডীদাস বৈষ্ণব পদাবলির দুঃখের করি,

সত্যের কবি, বিরহের শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি পূর্বরাগের শ্রেষ্ঠ কবি।

চণ্ডীদাস জগৎ বলতে প্রেমকে বুঝিয়েছেন।

এ মধ্যযুগের খাঁটি / অকৃত্রিম বাঙালি কবি চণ্ডীদাস।

তাঁকে বাংলা কবি ভাষার আবিষ্কর্তা বলা হয়।

জ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন পাঠকদের দ্বারা লিখিয়ে নেন। ‘চণ্ডীদাস একচ্ছত্র লেখেন ও দশছর বঙ্কিমচন্দ্র চণ্ডীদাসের কবিতাকে রুদ্রাক্ষমালা বলেছেন।